রবিবার, ৭ মার্চ, ২০১০

আসহাবে রাসূলের জীবন বৈশিষ্ট্য

যারা ঈমানের সাথে হযরত রাসূলে করিম (সাঃ) এর সাক্ষাৎ ও সাহচর্য লাভে ধন্য হয়েছেন এবং ঈমানের সাথে মৃতু্য বরণ করেছেন তারাই সাহাবী । আমাদের মত মানুষ হওয়া সত্ত্বেও রাসুলে করিম (সাঃ) এর সানি্নধ্য ও সাহচর্য সাহাবীদেরকে এক খাঁটি মানব সম্প্রদায়ে পরিণত করেছে । হাদিসে সাহাবায়ে কেরাম (সাঃ) এর অনেক গুন বৈশিষ্ট বর্ণনা করা হয়েছে । আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সাহাবায়ে কেরামের পরিচয় দিতে গিয়ে তাদের কতক গুনের কথা বলেছেন । ১. কাফিরদের প্রতি কঠোর। ২. বেশি বেশি রুকু সেজদাকারী। ৩. নিজেদের মধ্য পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল । ৪. আল্লাহর সন্তুষ্ট ও অনুগ্রহ কামনাকারী । ৫. তাদের মুখমণ্ডলে সিজদার চিহ্ন পরিস্ফুট। ৬. পূর্ববর্তী আসমানি কিতাবের মধ্য রয়েছে। ৭. সাহাবীরা কবিরা গুনাহ থেকে দূরে থাকে । ৮. যাবতীয় অশ্লীলতা ও নোংরামী খেকে বেঁচে থাকা ৯. রাগান্বিত হলে ক্ষমা করে । ১০. প্রতিপালকের আহ্বানে সাড়া প্রদান করে । ১১. নামাজ কায়েম করে । ১২. পরস্পর পরামর্শ করে । ১৩. অর্জিত অর্থ যথারীতি ব্যয় করে । ১৪. কারো অত্যাচারকে নীরবে মাথা পেতে নেয় না। ১৫. আল্লাহর আয়াত দ্বরা উপদেশ গ্রহণ করে । ১৬. আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করে । ১৭. রাতের বিভিন্ন সময়ে শয্যা ত্যাগ করে ও আশা আকাঙ্ক্ষার মধ্য ডাকে । ১৮. আল্লাহর রহমত প্রত্যাশা করে । ১৯. পরকালের জবাবদিহিতার ভয় করে । ২০. তারা নিরহংকারী । নিম্নে উদাহরণসহ সাহাবীদের গুনাবলী আলোচনা করা হল- সাহাবীরা ছিলেন পরোপকারী, জনসেবক ও দানশীলঃ ইসলামে পরোপকার জনসেবা ও দানশীলতার জন্য এমনভাবে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করে যে , মানুষের মনে কৃপণতা, সংকীর্ণতা , দারিদ্র্যভীতি ইত্যাকার শয়তানী প্ররোচনা ঢুকতেই পারে না। সাহাবীরা ছিল এক্ষেত্রে মূর্ত প্রতীক , যখন নাযিল হল-"কে আছো যে আল্লাহকে উত্তম দান দেবেন। তখন আবু দারদাহ নামক সাহাবী বললেন , হে আল্লাহর রাসূল আল্লাহ তা'আলাও কি তার বান্দাদের কাছে দান চান ? রাসূল (সাঃ) বললেন, হ্যাঁ। আবু দারদাহ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল আপনার হাতটা এগিয়ে দেন এবং সাক্ষী হোন, আমি আমার মালিকানা ভুক্ত অমুক বাগানটা আল্লাহর পথে সাদাকা করে দিলাম , ঐ বাগানে আমার শরীক নেই।" উল্লেখ্য যে ঐ বাগানে সাতশ ফলবান খেজুর গাছ ছিল। এরপর এই সাহাবী বাড়িতে গেলেন। তিনি নিজের সিদ্ধান্তের কথা স্ত্রীকে জানালেন স্ত্রী শোনা মাত্রই বাড়ি খালি করে দিতে লাগলেন এবং আনন্দের সাথে বললেন আপনি দারুণ লাভজনক ব্যবসা করেছেন। যখন নাযিল হলো -"তোমরা যা ভালোবাস তা থেকে যতক্ষণ আল্লাহর পথে ব্যয় না করবে ততক্ষণ পূণ্য লাভ করতে পারবে না।" তখন আবু তালহা আল আনসারী (রাঃ) বললেন- "ইয়া রাসুলাল্লাহ আমার ভূ-সম্পত্তিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় যা আমি ওটা আল্লাহর পথে সদকা করে দিচ্ছি। এর প্রতিদান আমি আল্লাহর কাছে কামনা করি। আপনি এটা যেভাবে ব্যয় করতে চান করুন।" এরপর হযরত ওমর (রাঃ) তার খায়বরের জমি ওয়াকফ করেন। একবার খলিফা আবু বকর সিদ্দিকের (রাঃ) যুগে মদিনায় অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয়। সে সময় হযরত উসমান (রাঃ) গম তেল ও কিসমিস বোঝাই এক হাজার উটের এক বিরাট বাণিজ্য বহরের পুরোটাই গরিব মুসলমানের জন্য সদকা করে দেন। সে সময় অন্য ব্যবসায়ীরা তাকে এই সামগ্রীর জন্য মুনাফা হিসেবে ক্রয় মূল্যের পাঁচ গুণ দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু তিনি তাতে রাজি হননি। হযরত আবু বকর (রাঃ) খলীফা হওয়া সত্ত্বেও তিনি মহল্লার সেই দরিদ্র মেয়েদের ছাগল দোহন করে দিতে গেলেন যাদের পিতা যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। হযরত উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ) বলেন আমি প্রতিদিন সকালে এক বৃদ্ধার বাড়িতে তার ঘরের কাজ করে দিতাম। প্রতিদিনের মত একদিন তার বাড়িতে উপস্থিত হলে বৃদ্ধা বললেন- আজ কোন কাজ নেই। একজন সৎলোক তোমার আগেই কাজ গুলো শেষ করে গেছে। হযরত উমর রাঃ পরে জানতে পারলেন সেই সৎ লোকটি হযরত আবু বকর রাঃ । খলীফা হওয়া সত্ত্বেও এভাবে এক অনাথ বৃদ্ধার কাজ করে দিয়ে যেতেন। রাসূল সাঃ তাবুক অভিযানের প্রস্তুতির ঘোষণা দিলেন। তখন সাহাবীরা ব্যাপকভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। আবু বকর রাঃ তার সকল অর্থ রাসুলের হাতে তুলে দিলেন। উমর (রাঃ) তার মোট অর্থের অর্ধেক নিয়ে হাজির হলেন। আর এ যুদ্ধের এক তৃতীয়াংশ সৈন্যের যাবতীয় ব্যয়ভার উসমান নিজের কাধে তুলে নিলেন। তিনি সাড়ে নয়শ উট ও পঞ্চাশটি ঘোড়া সরবরাহ করেন। নিজের চাইতে অন্যের প্রয়োজন কে অগ্রাধিকার ভণ্ড নবী তুলাইহার বিরুদ্ধে হযরত খালিদ অভিযান পরিচালনা করেছেন। তুমুল লড়াই চলছে। প্রতিটি সংঘর্ষে তুলাইহার সঙ্গীরা পরাজয় বরণ করছে। একদিন তুলাইহা তার ঘনিষ্টজনদের কাছে জিজ্ঞেস করলো আমাদের এমন পরাজয় হচ্ছে কেন ? তারা বলল-কারণ আমাদের প্রত্যেকেই চায় তার সঙ্গীটি তার আগে মারা যাক। অন্য দিকে আমরা যাদের সাথে লড়ছি তাদের প্রত্যেকে চায় তাদের সঙ্গীর পূর্বে সে মৃতু্যবরণ করুক। তৎকালীন বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি পারস্যের সাথে মুসলমানদের তুমুল লড়াই হল। ইয়ারমুকের ময়দানে হারিস ইবনে হিসমে আয়্যাশ ইবনে আবি রাবিআ ও ইকরামা ইবনে ইবনে আবি জাহেলকে (রাঃ) ক্ষত বিক্ষত অবস্থায় দেখা গেল। পিপাসায় কাতর হযরত হারিস (রাঃ) পানি চাইলেন। যখন তাকে পানি দেয়া হল এবং তিনি পানি পান করতে যাবেন তখন ইকরামা (রাঃ) তার দিকে তাকালে হারিস বললেন ইকরামাকে দাও। পানির গ্লাসটি যখন ইকরামার কাছে নিয়ে যাওয়া হল তখন আয়্যাশ (রাঃ) তার দিকে তাকালেন। তা দেখে ইকরামা বললেন আয়্যাশকে দাও। আয়্যাশের (রাঃ) এর কাছে পানির গ্লাসটি নিয়ে যাওয়া হলে দেখা গেল তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তার পর গ্লাসটি হাতে নিয়ে তার অপর দুই সাথীর কাছে নিয়ে গিয়ে দেখা গেল তারাও একই পথের পথিক হয়েছেন। সবাই চেয়েছেন নিজের জীবনের উপর অন্যের জীবনকে প্রাধান্য দিতে। একদিন রাসুল (সঃ) এর একজন মেহমান আসলে তিনি বললেন যে আজ এই লোকটিকে মেহমান হিসেবে নিয়ে যাবে আল্লাহ তার প্রতি সদয় হবেন। আবু তালহা (রাঃ) তাকে সঙ্গে করে বাড়িতে আসলেন বাড়িতে সেদিন ছোট ছেলে মেয়েদের খাবার ছাড়া অতিরিক্ত কোন খাবার ছিল না। তাই স্ত্রী উম্মু সুলাইমা ভুলিয়ে ভালিয়ে সন্তানদের ঘুম পাড়ালেন। তারপর যে সামান্য খাবার ছিল তা মেহমানের সামনে হাজির করে নিজেরাও খেতে বসলেন। মেহমান তা বুঝতে না পেরে পেট ভরে আহার করলেন। উম্মুল মু'মিনীন হযরত আয়েশা (রাঃ) একদিন রোজা আছেন। ইফতারের জন্য ঘরে কেবল এক টুকরা রুটি আছে। ইফতারের আগে এক দুঃস্থ মহিলা এসে কিছু খাবার চায়। তিনি দাসীকে রুটির টুকরাটি তাকে দিতে বলেন। দাসী বলে, আপনি ইফতার করবেন কি দিয়ে? তিনি বললেন , রুটির টুকরোটি তাকে দাও। ইফতাররে কথা পরে চিন্তা করা যাবে। আপনজন থেকেও আন্দোলনকে অগ্রাধিকারঃ বদর যুদ্ধের দিন আবু উবাইদা (রাঃ) যুদ্ধের ময়দানে এমন বেপরোয়াভাবে কাফিরদের উপর আক্রমণ করেন। মুশরিকরা তার আক্রমণে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে অশ্বারোহী সৈনিকরা প্রাণের ভয়ে দিশেহারা হয়ে দিক্বিদিক ছুটতে থাকে। কিন্তু শত্রু পক্ষের এক ব্যক্তি বার বার ঘুর ফিরে তার সামনে এসে দাঁড়াতে লাগল। আর তিনিও তার সামনে থেকে সরে যেতে লাগলেন। অবশেষে সে শত্রু পক্ষ ও আবু উবাইদার মাঝখানে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। যখন আবু উবাইদার ধৈর্য্যের বাধ যখন ভেঙ্গে গেল তিনি তার তরবারির এক আঘতে লোকটির মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। লোকটি মাটিতে গড়িয়ে পড়ল। আর লোকটি ছিল আবু উবাইদার পিতা আব্দুল্লাহ ইবনুল জাররাহ। ইবনে ইসহাক বলেন, বদরের যুদ্ধে বন্দিদের রাসূল (সঃ) এর নিকট আনার পর তিনি তাদেরকে সাহাবীদের মধ্যে বণ্টন করে দিয়ে তাদের সাথে উত্তম আচরন করতে নির্দেশ দিলেন। মুস'আব ইবনে উমায়ের (রাঃ) এর আপন ভাই আবু আযীয ইবনে উমায়র ইবন হিশাম যুদ্ধ বন্দিদের মধ্যে ছিল। আবু আযীয বললো ভাই মুসআব আমাকে তুমি নিয়ে যাও। মুস'আব তাকে আটককারী আনসারীকে বললেন, ওকে মুক্তি দেবেন না। ওর মা একজন ধনাঢ্য মহিলা এবং সম্ভবত ওর মুক্তির জন্য তিনি আপনাকে ভালো মুক্তিপণ প্রদান করবেন। ইবন হিশাম বর্ণনা করেন আবু আযীয মুশরিকদের নিশান বরদার ছিল। আন নাদার ইবন আল হারিছ নিহত হওয়ার পর সে এই দায়িত্ব গ্রহণ করে। তার ভাই মুসয়াব (রাঃ) যখন তাকে গ্রেফতাররকারী আবু আল ইয়াসারকে এ কথা বলছিলেন তখন আবু আযীয তাকে বললো -হে ভাই আমার জন্য এই কি তোমার সুপারিশ? মুসআব উত্তরে বলেন আমার গ্রেফতারকারী আবু ইয়াসার আমার ভাই , তুমি নও। হযরত আবু সিদ্দিকের (রাঃ) সন্তানদের সকলে প্রথম ভাগে ইসলাম গ্রহণ করলেও আবদুর রহমান (রাঃ) দীর্ঘদিন পর্যন্ত ইসলাম থেকে দূরে থাকেন। বদর যুদ্ধে মক্কার কুরাইশদের পক্ষে তিনি যোগ দিয়েছিলেন। যুদ্ধের মাঝামাঝি পর্বে তিনি একটু সামনে এগিয়ে এসে মুসলমানদের প্রতি চ্যালেঞ্জের সুরে বললেন- 'হাল মিন মুবরিযিন'- আমার সাথে দ্বন্দ্বযুদেধর সাহস রাখে এমন কেউ কি আছে ? তার এ চ্যালেঞ্জ শুনে পিতা আবু বকর (রাঃ) তিনি পুত্রের সাথে দ্বন্দ্ব যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার কথা ব্যক্ত করলেন কিন্তু হযরত রাসূলে করীম (সাঃ) তাকে নিবৃত্ত করেন। আবদুর রহমান (রাঃ) উহুদ যুদ্ধে কুরাইশদের পক্ষে ছিলেন। পরবর্তীকালে একদিন আবদুর রহমান স্মৃতিচারন করতে গিয়ে বলেন উহুদ যুদ্ধে আমি আপনাকে সামনে পেয়ে এড়িয়ে গিয়েছিলাম। জবাবে আবু বকর (রাঃ) বলেন আমি তোমাকে নাগালে পেলে ছেড়ে দিতাম না। ইসলামও রাসূল সাঃ এর কট্টর দুশমন ছিলেন উতবা। তার পুত্র আবু হুজাইফা রাঃ সেই প্রথম পর্বে মুসলমান হন। বদর যুদ্ধে একপক্ষে তিনি এবং অন্য পক্ষে তার পিতা বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেন। সেদিন আবু হুজাইফা (রাঃ) চেঁচিয়ে পিতা প্রতি পক্ষের দু'সাহসী বীর উতবাকে দ্বন্দ্ব যুদ্ধের আহবান জানান। তার এ আহবান শুনে তার সহোদর ভাই হিন্দ এক কবিতায় তাকে তিরস্কার ও নিন্দা করেন। শেষ পর্যন্ত বদর যুদ্ধে উতবা সহ অধিকাংশ কুরাইশ নেতা মুসলিম বাহিনীর হাতে নিহত হয় এবং তাদের সকলের লাশ একটি কুপে নিক্ষেপ করে মাটি চাপা দেওয়া হয়। বনু আল-মুসতালিক মতান্তরে তাবুক যুদ্ধের এক পর্যায়ে উট ঘোড়ার পানি পান করানোকে কেন্দ্র করে আনসার ও একজন মুহাজির ব্যক্তির মধ্যে ঝগড়া হয়। এ ঝগড়ার এক পর্যায়ে মুনাফিক ইবন উবাই রাসূল (সাঃ) ও মুহাজিরদের প্রতি ইঙ্গিত করে মন্তব্য করে _ 'মদীনায় পেঁৗছাতে পারলে আমরা অভিজাতরা এই ইতরদেরকে বের করে দেব।' আল্লাহর রাসূল (সা) ও তাঁর বহু মুহাজির সঙ্গী-সহচরদের সম্পর্কে উচ্চারিত ইবন উবাইর মহা আপত্তিকর মন্তব্যটি এক সময় ছেলে আব্দুল্লাহর কানে গেল। তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সামনে হাজির হয়ে বললেন, 'আমার পিতা আপনাকে ইতর বলে গালি দিয়েছেন। আমি আল্লাহর নামে কসম করে বলছি, আপনি নন, তিনিই ইতর। তারপর যে কথাটি তিনি বললেন তা অতি চমকপ্রদ ও বড় বিস্ময়কর। বললেন, গোটা খাজরাজ গোত্রের মধ্যে আমার চেয়ে বেশি পিতার বাধ্য ও অনুগত ছেলেটি দ্বিতীয়টি নেই। তবুও যদি আপনি তাঁকে হত্যা করাতে চান তবে আমাকে হুকুম দিন। আমি তার মাথাটি আপনার নিকট হাজির করছি। কিন্তু অন্য কোন মুসলমান যদি আমার পিতাকে হত্যা করে তাহলে আমার পিতার ঘাতক হবে আমার চোখের কাঁটা। আমি তাঁকে সহ্য করতে পারবো না। তখন হয়তো তাকে হত্যা করবো এবং একজন মুসলমান হত্যার দায়ে আমার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। তাঁর কথা শেষ হলে রাসূল (সা) বললেন তাঁকে হত্যা করানোর কোন উদ্দেশ্য ও ইচ্ছা আমার নেই। আব্দুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে কথা শেষ করে রাস্তায় এসে দাঁড়ালেন। পিতাকে আসতে দেখে উটের পিঠ থেকে নেমে অসি উঁচু করে বললেনঃ যতক্ষণ আপনি মুখ দিয়ে একথা উচ্চারণ না করবেন _ 'আমি ইতর এবং মুহাম্মদ অতি সম্মানীয়' _ ততক্ষণ এ অসি কোষবদ্ধ হবে না। আপনি এক পাও ্এগুতে পারবেন না। অবস্থা বেগতিক দেখে সে উচ্চারণ করলো - 'তোর ধ্বংস হোক! মুহাম্মদ সম্মানীয় এবং আমি ইতর।' একটু পিছনে রাসূলে করীম (সা) আসছিলেন। পিতা-পুত্রের সংলাপ কানে গেল। তিনি আব্দুল্লাহকে নির্দেশ দিলেন ঃ তাকে ছেড়ে দাও। আল্লাহর কসম যতদিন সে আমাদের মধ্যে আছে ততদিন আমরা তার সাথে ভাল ব্যবহার করবো। সাহাবীরা ছিলেন সাম্য ও সমতার প্রতীক: খলিফা হযরত উমর (রাঃ) মদীনার একটি গলি দিয়ে হেটে যাচ্ছিলেন। সহসা একটা জীর্ণশীর্ণ মেয়ে শিশুকে দেখলেন ওঠি-পড়ি করে ছুটে যাচ্ছে। তিনি সাথীদের জিজ্ঞেস করলেন মেয়েটার এমন দুরবস্থা কেন? তোমাদের কেউ কি একে চেন? হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাঃ বললেন - ওতো আমারই মেয়ে। হযরত উমর (রাঃ) বললেন- তা ওর এমন করুণ দশা কেন? আবদুল্লাহ বললেন আপনার কাছে যা কিছু আছে তা থেকে আমাদেরকে তো যথেষ্ট পরিমাণে দেন না। এ কারনেই মেয়েটার এমন দশা হয়েছে। উমর (রাঃ) বললেন- আল্লাহর কসম আমার কাছে তোমাদের জন্য সাধারণ মুসলমানের সমপরিমাণ ভাতার চেয়ে বেশি কিছুই নেই। তাতে তোমাদের প্রয়োজন পূরণ হোক বা না হোক। আমার ও তোমার মধ্যে আল্লাহর কিতাবই চূড়ান্ত ফয়সালাকারী। উহুদ যুদ্ধে হযরত হামযা (রাঃ) শহীদ হলেন। হযরত সাফিয়া (রাঃ) হযরত হামযা (রাঃ) এর বোন। ভাইয়ের দাফনের জন্য দুই খণ্ড কাপড় নিয়ে আসলেন। দেখলেন হামযার (রাঃ) লাশের পাশে আর একজন অনসারী ব্যাক্তির লাশ পড়ে আছে। ইসলাম সাফিয়ার মধ্যে যে মূল্যবোধ সৃষ্টি করেছিল তার কারনে তিনি এক খানা কাপড় তার দাফনের জন্য দানের সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু কোন কাপড়খানা দিবেন? হযরত আবুজার (রাঃ) দুনিয়া ত্যাগী এবং পরকালমুখী জীবন যাপন করতেন। একবার এক ব্যক্তি তার কাছে গিয়ে তার ঘরের ভিতরে দৃষ্টি দিয়ে কোন আসবাবপত্র ও সাজ সরঞ্জাম দেখতে পেলেন না। তিনি আবুজান (রাঃ) এর কাছে জিজ্ঞেস করলেন, হে আবু যার আপনার ঘরের আসবাবপত্র কোথায় তিনি উত্তরে বললেন, সেখানে অর্থাৎ আখেরাতে যেখানে আমাদের আর একটি বাড়ি আছে ভাল ভাল ফার্ণিচার ও জিনিস গুলো আমরা সেখানে পাঠিয়ে দেই। অনাড়ম্বর জীবনযাপন হযরত উমার (রা:) সাঈদ (রা:)কে হিমসের ওয়ালী নিযুক্ত করেন। পরবর্তীতে উমার হিমস সফরে গেলে জনগণ তাদের আমীরের বিরূদ্ধে ৪টি অভিযোগ উত্থাপন করেন ঃ ১. বেশ খানেক বেলা না হওয়া পর্যন্ত তিনি আমাদের দেখা দেন না। জবাবঃ আমার কোন চাকর বাকর নেই। আটা মাখা ও রুটি তৈরির কাজও আমি করে থাকি। তাই খানিকটা বেলা হয়ে যায়। ২. তিনি রাতের বেলা কাউকে সাক্ষাত দান করেন না। জবাবঃ আল্লাহর কসম! এ বিষয়টি প্রকাশ করা আমার মনঃপুত নয়। তবুও বলছি, আমি দিন মানুষের জন্য এবং রাত আল্লাহর জন্য নির্ধারিত করেছি। ৩. মাসে একটি দিন তিনি কাউকে সাক্ষাত দেন না। জবাব, পড়নের এ কাপড় ছাড়া আমার অন্য কোন কাপড় নেই। মাসে একবার আমি নিজহাতে তা পরিষ্কার করি এবং শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করি। ৪. তিনি মজলিশে কথা বলার সময় মাঝে মাঝে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। জবাব, আমি মুশরিক অবস্থায় রাসূলের (সা:) সাহাবী খুবাইব ইবনে আদীকে শুলীতে চড়ানোর দৃশ্য দেখেছিলাম। কুরাঈশরা তার অংগ প্রত্যঙ্গ এক এক করে কেটে ফেলছে। এ দৃশ্য যখনই আমার সামনে ভেসে উঠে তখনই আমি তার জন্য কেন কিছু করিনি এ অনুশোচনায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। খলিফা হযরত উমর (রাঃ) সাঈদ ইবনে আমিরকে (রাঃ) হিসামের ওয়ালী তাকে ভাতাও নির্ধারিত করে দিতে চাইলেন। সাঈদ বিনীত ভাবে আরজ করলেন আমিরুল মুমিনিন আমি ভাতা দিয়ে কি করবো। বায়তুল মাল থেকে যে ভাতা আমি পাই তাইতো আমার প্রয়োজনের তুলনায় বেশি হয়ে যায়। সাঈদ(রাঃ) হিমসে চলে গেলেন । কিছুদিন পরের কথা আমীরুল মুমিনীন উমারের(রাঃ) কয়েকজন বিশ্বস্ত লোক হিমস থেকে মদিনায় আসলেন। তিনি তাদেরকে বললেন- "তোমরা তোমাদের গরীব মিসকীনদের একটি তালিকা আমাকে দাও। আমি তাদেরকে কিছু সাহায্য করবো। তারা একটা তালিকা প্রস্তুত করে উমরের হাতে দিল। সেই তালিকায় সাঈদ ইবনে আমিরের নামটিও ছিল। খলিফা জিজ্ঞেস করলেন এ সাঈদ ইবনে আমির কে? তারা বললেন আমাদের আমীর। তিনি জিজ্ঞেস করলেন- তোমাদের আমীরও কি এত গরিব! তারা বললেন- হ্যাঁ। আল্লাহর কসম একাধারে কয়েকদিন পর্যন্ত তার বাড়িতে উনুনে হাড়ি চড়ে না।" হযরত আনাস (রাঃ) বলেন , হযরত ফারুকে আজম (রাঃ) যখন আমীরুল মুমিনীন ছিলেন তখন দেখেছি তার জামার উপর তিনটি তালি ছিল। হযরত উমর (রাঃ) যখন সিরিয়ায় গেলেন তখন তার জামার নিচের দিকটা ছেড়া ছিল। জামাটি ছিল লম্বা ও মোটা। তিনি জামাটি খুলে ধোয়ার ও তালি লাগানোর জন্য দিলেন। সাথে সাথে তার জন্য আরেকটি নতুন মসৃণ জামা তৈরী করে আনা হলো। তিনি তা নেড়েচেড়ে দেখে ছুঁড়ে ফেললেন এবং বললেন আমার পুরনো জামাটি আমাকে দাও। কারণ সেটা আমার ঘাম শুষে নেয়। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) তখন মদিনার ওয়ালী। নিজ পরিবারের জন্য সংগৃহিত কাঠের বোঝা পিঠে চাপিয়ে একদিন মদিনার একটি পথ দিয়ে তিনি চলছেন। পথে ছালাবা ইবনে মালিকের পাশ দিয়ে যাবার সময় বললেন ছালাবা আমীরের জন্য পথটা একটু ছেড়ে দাও। ছালাবা বললেন , আল্লাহ আপনার ওপর রহমত করুন এত প্রশস্ত পথ দিয়েও যেতে পারছেন না। আবু হুরায়রা(রাঃ) বললেন , তোমাদের আমীর ও তার পিঠের বোঝাটির জন্য পথটা একটু প্রশস্ত করে দাও। মক্কায় মুসয়াব ইবনে উমায়ের চেয়ে সুদর্শন এবং উৎকৃষ্ট পোশাকধারী আর কেউই ছিল না। ঐতিহাসিকরা বলেছেন: তিনি ছিলেন মক্কার সর্বোৎকৃষ্ট সুগন্ধি ব্যবহারকারী। তার ইসলাম গ্রহণের খবর শুনে তার মা তাকে আটকে রাখে। তিনি মায়ের চোখে ধূলো দিয়ে হাবশায় চলে যান। রাসূল (সাঃ) পরিচালিত একটি বৈঠকের পাশ দিয়ে মুসয়াব যাচ্ছিলেন। সাহাবীরা তাকে দেখে কেঁদে ফেললেন। কারণ, মুসয়াবের গায়ে তখন শত তালি দেওয়া জীর্ন শীর্ণ একটি চামড়ার টুকরো। এককালে তার পরিচ্ছদ হতো বাগিচার ফুলের মত কোমল চিত্তাকর্ষক ও সুগন্ধিময়। উহুদ যুদ্ধের ঝাণ্ডা রাসূল (সা:) মুসআবের হাতে তুলে দেন। কাফিররা তার দুটো হাতই কেটে ফেলে। তিনি "ওয়ামা মুহাম্মদুন ইল্লা রাসুল" বলতে বলতে শাহাদাত বরণ করেন। এ বাক্যটি তখনও নাযিল হয় নি। তিনি নিহত হওয়ার পরেই জিবরীল আয়াতটি নিয়ে উপস্থিত হন। কাফনের একটি চাদর, যা দিয়ে পা ঢাকলে মাথা বেড়িয়ে পড়ে। রাসূল (সা:) প্রতি তাকিয়ে বললেন, আমি তোমায় মক্কায় দেখেছি, সেখানে তোমার চেয়ে কোমল চাদর এবং সুন্দর ফুলকী আর কারো ছিল না। প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গিকার পালনেঃ বিজয়ী মুসলিম বাহিনী দিমাশক হিমস ও সিরিয়ার অন্য শহর গুলোকে একে একে জয় করে। তার পর সন্ধির শর্ত অনুসারে সেখানকার অধিবাসীদের জান ও মালের হিফাজত ও দেশের প্রতিরক্ষার জন্য কিছু কর আদায় করে। কিন্তু পরবতর্ীতে রোমান সম্রাট হিরাক্লিয়াস মুসলিম বাহিনীকে পরাজিত করার জন্য অগ্রসর হতে থাকেন । এ সিদ্ধান্তের কারণে হযরত খালিদ(রাঃ) হিমসবাসীকে , আবু উবাইদা(রাঃ) ছিমাশক বাসীকে এবং অন্যান্য সেনাপতিগণ অন্যান্য শহর বাসীকে একত্র করে বললেন আমরা আপনাদের কাছ থেকে আপনাদের জান ও মালের হিফাজত করার জন্য এবং বহিরাগত হানাদার আক্রমণ থেকে আপনার রক্ষার জন্য যে কর আদায় করেছি। কিন্তু দু:খের বিষয় এখন আমরা আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি। আপনাদের সাথে কৃত অঙ্গীকার পালন করতে পারছিনা। সুতরাং আপনাদের নিকট থেকে গৃহিত টাকা পয়সা আমরা ফেরত দিচ্ছি। এই নিন আপনাদের সেই সব টাকা পয়সা। কাদেসিয়ার যুদ্ধের সময় হযরত সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস(রাঃ) এর নিকট মদ পানের অভিযোগে হযরত আবু মিনহাজকে (রাঃ) গ্রেফতার করে আনা হয়। তিনি তাকে বন্দি করে রাখার নির্দেশ দেন। লড়াই তুমুল আকার ধারণ করে, বন্দি অবস্থায় তিনি সেনাপতি সাদের (রাঃ) স্ত্রীকে বললেন- আপনি আমার বেড়ী খুলে দেন। আমি আপনার সাথে অঙ্গীকার করছি আল্লাহ আমাকে নিরাপদে রাখলে আমি অবশ্যই ফিরে আসবো এবং নিজ হাতে পায়ে বেড়ী পরবো। আর যদি যুদ্ধেআমি মারা যাই আপনারা আমার থেকে নিষ্কৃতি পাবেন। হযরত সাদের স্ত্রী তাকে ছেড়ে দিলে তিনি এক লাফে সাদের (রাঃ) বালকা নামক ঘোড়ায় আরোহণ করে তীর ধনুক নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। যুদ্ধে শত্রুরা পরাজিত হলে আবু মিনহাজ (রাঃ) অঙ্গিকার মত ফিরে এসে নিজ হাতে বেড়ী পরলেন। অত:পর হয়রত সাদ (রাঃ) তার স্ত্রী এর নিকট হতে ঘটনার বিবরণ শুনে তিনি আবু মিনহাজ কে মুক্তি দেন। যুদ্ধ ও শান্তি সর্বদাই তারা ছিলেন মানবতাবাদীঃ আবু দুজানা (রাঃ) যখন শত্রু সেনাদের কাতারের পর কাতার খণ্ড খণ্ড করে সামনে এগুতে থাকেন। তখন হামজার (রাঃ) কলজে চিবানো হিন্দা তার সামনে পড়ে যায়। হিন্দা যুদ্ধে শরীক ছিল এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে তার আবেগ ছিল বিষাক্ত, তাই তাকে হত্যা করা কোন দোষের ছিল না। আবু দুজানার ও তার মাথা তাক করে তরবারী উঁচু করেছিলেন। কিন্তু তৎক্ষণাৎ তিনি তরবারী দিয়ে কোন নারীর প্রাণ সংরক্ষন করা সমীচীন নয় -রাসূল সঃ এর এই উক্তিটি মনে হওয়ার সাথে সাথে তিনি তরবারী নামিয়ে নেন। জীব জন্তুর প্রতি সদয়ঃ হযরত আবু দারদা (রাঃ) মৃতু্যর সময় নিজের উটকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন , হে উট কিয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে আমার সাথে ঝগড়া করিসনে। কেননা আমি কখনো তোর ক্ষমতার অতিরিক্ত বোঝা তোর পিঠে চাপাইনি। হযরত আদী ইবন হাতিম (রাঃ) পিপড়াদের খাওয়ার জন্য রুটি টুকরো টুকরো করে দিতেন এবং বলতেন এরা আমাদের পতিবেশী। কাজেই আমাদের কাছে তাদের অনেক অধিকার পাওয়া রয়েছে। একবার হযরত উমর (রাঃ) দেখলেন, এক ব্যক্তি ছাগলের পা ধরে মাটির ওপর দিয়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছে জবাই করার জন্য তিনি তাকে বললেন- তোমার ওপর আক্ষেপ। ওকে মৃত্যর দিকে ভালোভাবে নাও। তথ্য সূত্রঃ- ১. আসহাবে রাসুলের জীবন কথা ২. মানবতার বন্ধু মোহাম্মদ সঃ ৩. সীরাতে ইবনে হিশাম ৪. রাসুলের যগে মদীনার রুপ ও বৈশিষ্ট্য প্রচন্ড বিপদে অবিচল ও ধৈর্যশীল হযরত আম্মার ও সুমাইয়া একই সাথে ইসলাম গ্রহণ করেন। হযরত আম্মার সুমাইয়্যার সন্তান যিনি ছিলেন ইসলামের প্রথম শহীদ। মুশরিকরা আম্মারের (রাঃ) উপর অত্যন্ত কঠোর নির্যাতন করতেন। একদিন মুশরিকরা আম্মারকে আগুনের অঙ্গারের উপর শুইয়ে দিয়েছে। এমন সময় রাসূল (সঃ) সেখানে উপস্থিত হয়ে আম্মারের মাথায় পবিত্র হাতটি রেখে বললেন- হে আগুন ইব্রাহিমের মতো তুই আম্মারের জন্য ঠাণ্ডা হয়ে যা। একদিন মুশরিকরা তাকে দীর্ঘক্ষণ পানিতে ডুবিয়ে রাখে যে তিনি সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। এ অবস্থায় শত্রুরা তার মুখ থেকে তাদের ইচ্ছেমতো স্বীকৃতি আদায় করে নেয়। এরপর কাঁদতে কাঁদতে রাসূল (সঃ) এর নিকট হাজির হয়ে বললেন, আজ আপনার শানে কিছু খারাপ ও তাদের উপাস্যদের সম্পর্কে কিছু ভাল না বলা পর্যন্ত আমি মুক্তি পায় নি। রাসূল(সঃ) বললেন- তোমার অন্তর কি বলছে ? তিনি বললেন আমার অন্তর ঈমানে পরিপূর্ণ। এমতাবস্থায় রাসূল(সঃ) নিম্মোক্ত আয়াতটি তেলাওয়াত করেন "যে ব্যক্তি ঈমান আনার পর কুফরী করে তবে যাদেরকে বাধ্য করা হয় এবং তাদের অন্তর ঈমানের ওপর দৃঢ় তাদের কোন দোষ নেই ।" (আন নাহল-১৪ ) ইয়ামামার যুদ্ধে আম্মারের দেহ থেকে একটি কান বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এতে একজনতো তাকে কান কাটা বলে গালি দিয়েই বসেন। জবাবে তিনি বলেন আফসুস তুমি আমার সবচেয়ে প্রিয় ও উত্তম কানটিকে গালি দিলে যে কানটি আল্ল্লাহর পথে কাটা গিয়েছে। আবু হুরাইরা আদ-দাওসী (রা)ঃ বলেন-মাঝে মাঝে আমি এত ক্ষুধার্ত হয়ে পড়তাম যে, কষ্ট সহ্য করতে না পেরে রাসুলুল্লাহর কোন সাহাবীর নিকট কুরআনের কোন একটি আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতাম অথচ আমি তা জানতাম। আমার উদ্দেশ্য হত, হয়ত তিনি আমার এ অবস্থা দেখতে পেয়ে আমাকে সঙ্গে করে তার বাড়ীতে নিয়ে আহার করাবেন। একদিন আমার ভীষণ ক্ষুধা পেল। ক্ষুধার যন্ত্রণায় আমি পেটে একটি পাথর বেঁধে নিলাম তারপর সাহাবীদের গমনাগমন পথে বসলাম। আবু বকরকে যেতে দেখে তাঁকে একটি আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। মনে করেছিলাম, তিনি আমাকে তাঁর সাথে যেতে বলবেন। কিন্তু তিনি ডাকলেন না। এরপর এলেন উমার ইবনুল খাত্তাব (রা)। তাঁকেও একটি আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনিও কিছু বললেন না। সবশেষে এলেন রাসুল (সাঃ)। তিনি আমার প্রচণ্ড ক্ষুধা অুভব করলেন। বললেন, আবু হুরাইরা? বললাম লাব্বাইকা ইয়া রাসুলুল্লাহ। একথা বলে পেছনে পেছনে আমি তাঁর বাড়িতে গিয়ে ঢুকলাম রাসূল (সা) বাড়ীতে ঢুকে এক পেয়ালা দুধ দেখতে পেলেন। বাড়ীর লোকদের জিজ্ঞাসা করলেন দুধ কোথা থেকে এসেছে? (১ম খন্ড, ১৫৩ পৃ:) শাহাদাতের তামান্না উহুদ যুদ্ধের আগের দিন রাতে আব্দুল্লাহ ইবন আমর বিন হারাম (রা) ছেলে জাবিরকে ডেকে বললেন, 'বাবা আগামীকালের প্রথম শহীদ আমি হতে চাই। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর পরে তুমিই আমার সর্বাধিক প্রিয় ব্যক্তি। আমি তোমাকে বাড়িতে রেখে যাচ্ছি। তোমার বোনদের সাথে ভাল ব্যবহার করবে এবং আমার যে ঋণ আছে তা পরিশোধ করবে। দিনের বেলা তুমুল যুদ্ধ শুরু হল। হযরত আব্দুল্লাহ দারুণ সাহসের সাথে যুদ্ধ করে শাহাদাত বরণ করলেন। তিনিই হলেন দিনের প্রথম শহীদ। উসামা ইবন ঊনাইদ তাকে হত্যা করে। পৌত্তলিকরা তার লাশ কেটে কুটে একেবারে বিকৃত করে ফেলে। দাফনের ছয়মাস পর জাবির পিতার লাশটি কবর থেকে তুলে অন্য একটি কবরে দাফন করেন। তখন কেবল কান ছাড়া গোটা দেহ এমন অক্ষত ছিল যে, মনে হচ্ছিলো কিছুক্ষণ আগেই তাঁকে দাফন করা হয়েছে। এর ৪৬ বছর পর লাশটি আবার কবর থেকে তোলা হয়। জাবির বর্ণনা করেছেন কবরটি ছিল একটি পানির নালার ধারে। একবার প্লাবনের সময় তাতে পানি প্রবেশ করে। কবরটি খোড়া হয়। দেখা গেল, আব্দুল্লাহর মুখে, যেখানে আঘাত পেয়েছিলেন তাঁর একটি হাত সেই ক্ষতের উপর। হাতটি সড়িয়ে দিলে সেই স্থান থেকে রক্ত ঝড়তে লাগল। হাতটি আবার সেখানে রেখে দিলে রক্ত ঝড়া বন্ধ হয়ে গেল। জাবির বলেনঃ 'আমি দেখলাম আমার পিতা যেন ঘুমিয়ে আছেন। তাঁর দেহে কম-বেশি কোন রকম পরিবর্তন হয় নি। জাবিরকে প্রশ্ন করা হলোঃ তাঁর কাফনটি কেমন ছিল? বললেনঃ কাফনেরও কোন পরিবর্তন হয় নি। একই অবস্থায় ছিল। অথচ এর মধ্যে ৪৬টি বছর চলে গেছে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবন জাহাশ বদর ও উহুদ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। হযরত সা'দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস বর্ণনা করেছেন, উহুদ যুদ্ধের একদিন আগে আমি ও আব্দুল্লাহ দুআ করলাম। আমার ভাষা ছিল, 'হে আল্লাহ, আগামীকাল যে দুশমন আমার সাথে লড়বে সে যেন অত্যন্ত সাহসী ও রাগী হয়। যাতে তোমার রাস্তায় আমি তাকে হত্যা করে তার অস্ত্রশস্ত্র কেড়ে নিতে পারি।' আমার এ দুআ শুনে আব্দুল্লাহ 'আমীন' বলে উঠল। তারপর সে হাত উঠিয়ে দুআ করেঃ হে আল্লাহ, আমাকে এমন প্রতিদ্বন্দ্বী দান কর যে হবে ভীষণ সাহসী ও দ্রুত উত্তেজিত। আমি তোমার রাস্তায় তার সাথে যুদ্ধ করবো। সে আমাকে হত্যা করে আমার নাক, কান কেটে ফেলবে। যখন আমি তোমার সাথে মিলিত হব এবং তুমি জিজ্ঞেস করবে, 'আব্দুল্লাহ, তোমার নাক কান কিভাবে কাটা গেল?' তখন আমি বলবো, তোমার ও তোমার রাসুলের (স) জন্য। তিনি যেন দৈব্য দৃষ্টিতে দেখতে পাচ্ছিলেন, তাঁর এ বাসনা পূর্ণ হতে চলেছে। তাই বার বার কসম খেয়ে বলছিলেন, 'হে আল্লাহ, আমি তোমার নামে কসম খেয়ে বলছি, আমি শত্রুর সাথে যুদ্ধ করবো এবং সে আমাকে হত্যা করে আমার নাক-কান কেটে আমাকে বিকৃত করবে।' (উসুদুল গাবা)। হানজালা ইবন আবী 'আমীর (রা)ঃ উহুদ যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। আর এটাই ছিল তাঁর ইসলামী জীবনের প্রথম ও শেষ যুদ্ধ। তিনি স্ত্রী উপগত হয়ে ঘরে শুয়ে আছেন। এমন সময় ঘোষকের কণ্ঠ কানে গেলঃ 'এক্ষুণি জিহাদে বের হতে হবে।' জিহাদের ডাক শুনে 'তাহারাতের' (পবিত্রতা) গোসলের কথা ভুলে গেলেন। সেই অশুচি অবস্থায় কোষমুক্ত তরবারি হাতে উহুদের প্রান্তরে উপস্থিত হলেন। যুদ্ধ শুরু হল। তিনি কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ান ইবন হারবের সাথে দ্বন্দ্ব যুদ্ধে লিপ্ত হলেন। তাঁকে কাবু করে তরবারির আঘাত করবেন, ঠিক সেই সময় নিকট থেকে শাদ্দাদ ইবন আসওয়াদ আল-লায়সী দেখে ফেলে এবং দ্রুত হানজালার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তরবারির এক আঘাতে তাঁর মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন।) হযরত হানজালা (রা) নাপাক অবস্থায় শহীদ হন। শাহাদাতের পর ফিরিশতারা তাঁকে গোসল দেয়। তাই দেখে হযরত রাসুলে করীম (সা) সাহাবীদেরকে বললেন, তোমরা তাঁর স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করতো ব্যাপার কি? হিশাম ইবন 'উরওয়া বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা) হানজালার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেনঃ হানজালার ব্যাপারটি কি? স্ত্রী বললেনঃ হানজালা নাপাক ছিল। আমি তাঁর মাথার একাংশ মাত্র ধুইয়েছি, এমন সময় জিহাদের ডাক তাঁর কানে গেল। গোসল অসম্পূর্ণ রেখেই সেই অবস্থায় বেরিয়ে গেলেন এবং শাহাদাত বরণ করলেন। একথা শুনে রাসুল(সা) বললেনঃ এই জন্য আমি ফিরিশিতাদেরকে তাঁকে গোসল দিতে দেখেছি। উহুদের রণ-দামামা বেজে উঠল। হযরত আমর ইবন আল জামুহ ছেলেদের ডেকে ভললেন, তোমরা আমাকে বদরে যেতে দাওনি। এবার আমি তোমাদের কোন নিষেধ মানবো না। এ যুদ্ধে আমি যাবোই। ইবন ইসহাক ঘটনাটি এভাবে বর্ণনা করেছেনঃ 'আমর ইবনে আল জামুহ ছিলেন মারাত্মক ধরনের খোঁড়া। সিংহের মত তাঁর চার ছেলে ছিল। সকল কাজ ও ঘটনায় তাঁরা রাসূলুল্লাহ (সা) এর সঙ্গে থাকতেন। উহুদের দিনে তাঁরা তাদের পিতাকে যুদ্ধে গমন থেকে বিরত রাখতে চাইলেন। তাঁরা বললেন আল্লাহ আপনাকে মাজুর (অক্ষম) করেছেন। আপনার যুদ্ধে যাওয়ার দরাকর নেই। 'আমর (রা) খোঁড়াতে খোঁড়াতে রাসূল (সাঃ) এর কাছে এসে বললেনঃ আামর ছেলেরা আমাকে যুদ্ধে যেতে বারণ করছে। আল্লাহর কসম! আমি এ খোঁড়া পা নিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে জান্নাতে যেতে চাই। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, আল্লাহ তো আপনাকে মাজুর করেছেন। যুদ্ধে যাওয়া আপনার ওপর ফরজ নয়।' একথার পরও আমরকে তাঁর সিদ্ধান্তে অটল দেখে রাসূল (সা) তাঁর ছেলেদের বললেনঃ তোমরা তাঁকে বাধা দিওনা। আল্লাহ পাক হয়তো তাঁকে শাহাদাত দান করবেন। ইমাম সুহাইল বলেনঃ অন্যরা আরও বলেছেন, আমর বাড়ী থেকে বের হওয়ার সময় অন্তরে সবটুকু বিনীতভাব ঢেলে দিয়ে দু'আ করেন _ 'ইলাহী! তুমি আর আমাকে মদীনায় ফিরিয়ে এনো না।' আল্লাহ পাকের দরবারে তাঁর এ আকুল আবেদন কবুল হয়ে যায়। তিনি শহীদ হন। যুদ্ধক্ষেত্রে আমরের প্রাণহীন দেহ পড়ে আছে। রাসুল (সা) পাশ দিয়ে যাচ্ছেন। লাশটি দেখে চিনতে পেরে থমকে দাঁড়ালেন। বললেনঃ আল্লাহ তাঁর কোন কোন বান্দার কসম পূর্ণ করেন। আমর তাদেরই একজন। আমি তাঁকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে জান্নাতে হাঁটতে দেখতে পাচ্ছি। আমরের ছেলেরা তাঁর লাশ মদীনায় আনার জন্য একটি উটের উপরে উঠান। উট অবাধ্য হয়ে যায়। শত চেষ্টা করেও তাঁরা লাশটি মদীনার দিকে আনতে পারলেন না। তখন তাঁদের স্মরণ হলো পিতার অন্তিম দু'আটির কথাঃ 'প্রভু হে, আমাকে আর মদীনায় ফিরিয়ে এনো না।' তারা আর অহেতুক চেষ্টা করলেন না। পিতাকে তাঁরা তাঁর নিহত হওয়ার স্থানেই দাফন করেন। উহুদ যুদ্ধের দিন উসামা তাঁর সমবয়সী আরো কতিপয় কিশোর সাহাবীর সাথে উপস্থিত হলেন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সামনে। তাদের সবার ইচ্ছা জিহাদে অংশ গ্রহণ করা। রাসুল (সাঃ) তাদের মধ্য থেকে কয়েক জনকে নির্বাচন করলেন এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার কারণে অন্যদের ফিরিয়ে দিলেন। উসামা প্রত্যাখাত হয়ে বাড়ীতে ফিরছেন। চোখ দু'টি তার পানিতে টলমল। তাঁর ব্যথা, রাসুলুল্লাহ (সা) এর পতাকাতলে জিহাদের সুযোগ থেকে তিনি বঞ্চিত হলেন। একদিন রাসূল (সঃ) ইকরামার জন্য দোয়া করেছেন দেখে ইকরামা বলে উঠলেনঃ"হে আল্লাহর রাসূল আল্লাহর শপথ এতদিন আল্লাহর দ্বীনের প্রতিবন্ধকতায় যত ধন সম্পদ ব্যয় করেছি, এখন থেকে তার দ্বীনের প্রচার ও প্রসারে তার দ্বিগুন খরচ করবো। দ্বীনের বিজয়কে ঠেকানোর জন্য যত যুদ্ধ করেছি এখন থেকে দ্বীনের বিজয়ের জন্য তার চাইতে দ্বিগুন জিহাদ করবো। " রাসূলে করীম (সাঃ) এর হিজরতের সময় রাফে অল্প বয়স্ক একজন বালক মাত্র। তা সত্ত্বেও ইসলাম তাঁর অন্তরে গভীর ছাপ ফেলেছিল। তাঁর দুই চাচা জহির ও মুহাজির তখন মুসলমান। বদর যুদ্ধের রাফের বয়স চৌদ্দ বছর। যুদ্ধে যাওয়ার ইচ্ছা নিয়ে রাসূল (সাঃ) এর দরবারে হাজির হলেন। যুদ্ধে যাওয়ার বয়স হয়নি দেখে অন্যদের সাথে তাঁকেও ফেরত দিলেন। এভাবে হযরত রাফে বদরের যোদ্ধা হতে পারলেন না। মদীনার ছোট ছেলেদের প্রতি বছর রাসূলে করিম (সাঃ) এর সামনে হাজির করা হতো। তিনি তাদের মধ্য থেকে যাদেরকে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য উপযুক্ত মনে করতেন তাদেরকে বাছাই করতেন। হিজরী তৃতীয় সনে উহুদ যুদ্ধে যাত্রার সময় রাফেকে রাসূলুল্লাহ (সা) এর আনা হয়। তখন তাঁর বয়স পনোরো বছর পূর্ণ হয়েছে। সুতরাং তিনি যুদ্ধে যাওয়ার অনুমতি লাভ করলেন। এ সম্পর্কে রাফে বলেনঃ আমি সারিতে দাঁড়িয়ে পায়ের আঙ্গুলে ভর দিয়ে নিজেকে উঁচু করে দেখাচ্ছিলাম। রাসুল (সাঃ)কে পূর্বেই বলা হয়েছিল যে, আমি একজন দক্ষ তীরন্দাজ। অতঃপর রাসূল (সাঃ) আমাকে অনুমতি দান করেন করেন। তখন আমারই সমবয়সী সামুরা ইবনে জুন্দুব তার সৎ পিতা মুররী ইবনে সাবিতকে বললেন রাসূল (সাঃ) রাফে ইবন খাফিজকে অনুমতি দিলেন; কিন্তু আমাকে ফেরত দিলেন। মুররী তখন বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি রাফেকে অনুমতি দিয়েছেন, আর আমার ছেলে সামুরাকে ফেরত দিয়েছেন। সে কিন্তু কুস্তিতে রাফেকে হারিয়ে দিতে পারে। তখন রাসূল (সাঃ) বলেনঃ তোমরা দুইজন কুস্তি লাগো। এভাবে তারা দুইজন কুস্তি লাগেন এবং সামুরা রাফেকে হারিয়ে দিয়ে রাসূল (সাঃ) এর অনুমতি লাভ করেন। ইবনে হিশাম বলেনঃ দুই জনেরই বয়স তখন পনেরো বছর। আসহাবে রাসূলের ঈমানি দৃঢ়তাঃ হযরত আবুজার (রাঃ) দুনিয়া ত্যাগী এবং পরকালমুখী জীবন যাপন করতেন। একবার এক ব্যক্তি তার কাছে গিয়ে তার ঘরের ভিতরে দৃষ্টি দিয়ে কোন আসবাবপত্র ও সাজ সরঞ্জাম দেখতে পেলেন না। তিনি আবুজান (রাঃ) এর কাছে জিজ্ঞেস করলেন, হে আবু যার আপনার ঘরের আসবাবপত্র কোথায় তিনি উত্তরে বললেন, সেখানে অর্থাৎ আখেরাতে যেখানে আমাদের আর একটি বাড়ি আছে ভাল ভাল ফার্ণিচার ও জিনিস গুলো আমরা সেখানে পাঠিয়ে দেই। ইয়াসির (রাঃ) ও সুমাইয়া (রাঃ) ইসলামের দাওয়াত পেয়ে ইসলাম গ্রহন করেন। আবু জাহল ও তার সঙ্গীরা ঈমান গ্রহন করার কারনে তাদেরকে দিনের বেলায় লোহার পোষাক পরিয়ে রোদে দাঁড় করিয়ে রাখে এবং বেদম পিটুনি দেয়। আঘাতে আঘাতে জর্জরিত হয়ে যায় তাদের শরীর এবং এক পর্যায়ে ইয়াসির শাহাদাত বরণ করেন এবং আবু জাহল সুমাইয়া (রাঃ) কে ইসলাম ত্যাগ করার নির্দেশ দেয়। তিনি তার কথায় কান না দেয়ার কারনে আবু জাহল বল্লম দিয়ে তাকে শহীদ করে। এর পরেও তিনি অাঁকড়ে ধরেন ঈমানের ঐশ্বর্য। এরপর সুমাইয়া বিনতে খবরাত (রা ) শহীদ হন ,আল্লাহর সন্তোষ অর্জন করে পেঁৗছে যান জান্নাতের ঠিকানায়। লুবাইনা রা ছিলেন উমার ইবনে খাত্তাবের (রাঃ) দাসী । তিনি গোপনে ইসলাম গ্রহন করেন। উমার রাঃ তখনও ইসলাম গ্রহন করেননি এবং লুবাইনা (রাঃ) কে ইসলাম ত্যাগ করার নির্দেশ দেন। এবং চাবুক দিয়ে লুবাইনাকে পিটাতে পিটাতে ক্লান্ত হয়ে যান এবং ঘোষণা করেন-তোমাকে পিটানোর মত শক্তি আমার গায়ে নেই। ক্ষত বিক্ষত দেহ নিয়ে ঈমানের বলে বলিয়ান লুবাইনা ঘোষণা করেন -আপনি যদি ইসলাম গ্রহন না করেন আল্লা্লহ আপনার কাছ থেকে এর প্রতিশোধ নেবেন। নিদারুণ যন্ত্রনা ভোগ করা সত্ত্বেও তিনি ইসলাম ত্যাগ করেন নি। মক্কা নগরিতে ইসলামের বাণী প্রচার হওয়ার সাথে সাথে উম্মু শুরাইকা (রাঃ) ইসলাম গ্রহন করেন এবং দাওয়াতী কাজের জন্য বিভিন্ন গোত্রে গোত্রে যেতেন। একদিন মুশরিক নেতারা তাকে গ্রেফতার করে শুকনো রুটি এবং মধু খেতে বাধ্য করে। অতঃপর গরম রোদের উপর শুইয়ে দেয়। প্রচণ্ড রোদে আর গরম বালুর উত্তাপে তিনি ছটফট করতে থাকেন। এক পর্যায়ে এসে তিনি বোধ শক্তি হারিয়ে ফেলেন । আল্লাহর প্রতি তার নিখাঁদ ঈমান দেখে তার গোত্রের লোকেরা খুবই প্রভাবিত হয়। এক সময় তার গোত্রের লোকেরা তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ইসলাম গ্রহন করে। আমি ছিলাম রিক্ত হস্ত, দরিদ্র, পেটে পাথর বেঁধে সর্বদা রাসুল (সা) এর সাহচর্যে কাটাতাম। আর মুহাজিররা ব্যস্ত থাকতো তাদের ব্যবসা বাণিজ্যে আর আনসাররা তাঁদের ধন-সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণে।' তিনি আরও বলেন, "একদিন আমি বললামঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ, আমি আপনার অনেক কথাই শুনি, কিন্তু তার অনেক কিছুই ভূলে যাই।' একথা শুনে রাসুল (সা) বললেনঃ তোমার চাদরটি মেলে ধর।' আমি মেলে ধরলাম। তারপর বললেনঃ তোমার বুকের সাথে লেপ্টে ধর। আমি লেপ্টে ধরলাম। এরপর থেকে আর কোন কথাই আমি ভূলি নি। জ্ঞান অর্জনের প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগ এবং রাসুল (সা) এর মজলিসে উপস্থিতির ব্যাপারে অত্যধিক গুরুত্ব প্রদানের কারণে জীবনে তিনি এত ক্ষুধা ও দারিদ্রতা সহ্য করেছেন যে তার সমকালীনদের মধ্যে কেউ তা করেন নি। নিজের সম্পর্কে তিনি বলেছেনঃ খাব্বাব ইবনুল আরাত (রাঃ) হলেন বিশ্বের ৬ষ্ঠ মুসলমান তাই তাকে 'সাদেকুল ইসলাম' বলা হয়। তিনি ছিলেন আম্মারের দাস এবং মক্কা থেকে তরবারী নির্মাণের কলা কৌশল নিয়ে একটি দোকান দিয়ে তাতে কাজ করতেন। খাব্বাব ইসলাম গ্রহনের পর আর গোপন রাখতে পারলেন না । অল্প সময়ের মধ্যে তার এ খবর তার মনিব উম্নু আনসারের নিকট পেঁৗছে গেল। তোমার সম্পর্কে আমরা একটি কথা শুনেছি , আমরা তা বিশ্বাস করিনি। তিনি বলেন কি কথা? শুনেছি তুমি নাকি ধর্ম ত্যাগ করে বনী হাশিমের এক যুবকের অনুসারী হয়েছ ? তিনি বললেন -আমি ধর্ম ত্যাগী হইনি , তবে লা শারিক এক আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছি । তোমাদের মূর্তিপূজা ছেড়ে দিয়েছি, মুহাম্মদ আল্ল্লাহর বান্দা ও রাসূল (সাঃ) । কথা গুলি শুনামাত্র তারা তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো এবং দোকানের হাতুড়ি , লোহার পাত ও টুকরা তার উপর ছুঁড়ে মারলো এতে তিনি সংজ্ঞা হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন , দেহ তার রক্তে রঞ্জিত হয়ে গেলো । আগুন জ্বালিয়ে পাথর গরম করে সেই পাথরের ওপর তাকে শুইয়ে দিয়ে একজন তার বুকের উপর পা দিয়ে ঠেসে ধরেন। এভাবে তিনি শুয়ে থাকতেন আর তাঁর দু' কাধের চর্বি গলে বেয়ে পড়তো। এতে তার পিঠের মাংস উঠে যেত। সাহাবায়ে কেরামের জীবনের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো তাদের ঈমানের মজবুতি ও দৃঢ়তা। তারা যে যখনই ইসলাম গ্রহণ করুন না কেন, ইসলাম গ্রহণ করার পর তাদের ঈমান এত শক্ত রুপ ধারণ করে যে তাতে বিন্দু মাত্র দ্বিধা -সংকোচ দেখা যায়না। মক্কায় যারা ইসলাম গ্রহণ করেন তাদের প্রায় সকলের জীবন ,ধন সম্পদ ও মান সম্মান বিপন্ন হয়ে পড়ে। বিশেষত দাস ,দরিদ্র ও দুর্বল শ্রেণীর যারা ইসলাম গ্রহণ করেন তারাতো একেবারেই অসহায় হয়ে পড়েন। শুধু দুর্বল শ্রেণী কেন সমাজের বিত্তবান ও সম্পদশালীদের মধ্যে যারা ইসলাম গ্রহণ করেন তাদের অবস্থাও বিশেষ সুবিধার ছিলনা। মদীনায় হিজরতের পূর্বে তাদেরকে সবকিছু ছেঁড়ে ছুঁড়ে হাবশায় হিজরত করতে হয়েছিল। বনী হাশিমও বনী আবদি মুন্নাফের সম্ভ্রানত লোকদের ও মক্কায় শিয়াবে আবি তালিবে প্রায় তিন বছর বন্দী জীবন কাটাতে হয়। সে কি দু:সহ জীবন। ক্ষুধা ও অনাহারের জীবন। উপত্যকার বাইরে থেকে অনাহার ক্লিষ্ট নারী ওশিশুদের কান্নার রোল ও আর্তনাদ শোনা যেত। গাছের পাতা সিদ্ধ করে খেতে খেতে তাদের মুখে ঘা হয়ে গিয়েছিল। এভাবে তাদের তিনটি বছর কেটে গেল। অনাহার ও অপুষ্টিতে তাদের অনেকের জীবন সংক্টাপন্ন হয়ে পড়েছিল। বলা হয়েছে হযরত ফাতিমা (রাঃ) এখান থেকেই অপুষ্টির শিকার হন এবং সে কারণে অল্প বয়সে মারা যান। আমরা যদি ইসলামের প্রথম ভাগের মক্কার মুসলমানদের প্রত্যেকের জীবনের দিকে তাকাই তাহলে কাউকে ভালো অবস্থায় দেখতে পাইনা। গোটা মক্কায় তখন সন্ত্রাসের রাজত্ব চলছে। সে সন্ত্রাসের প্রধান পুরুষ আবু জাহল, উতবা ,শায়বা, উকবা, আবু সুফিয়ান প্রমুখ কোরাইশ নেতৃবৃন্দ এবং সে সন্ত্রাসের লক্ষ্যবস্তু মক্কার মুসলমানদের জান,মাল, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি। বেলাল, ইয়াসির, আম্মার, সুম্যাইয়া, সুহাইব, খাব্বাব, প্রমুখ দুর্বল মুসলমানদের ওপর যে জুলুম ও নির্যাতন চালানো হয়েছে তার কোন নজীর ইতিহাসে খুঁজে পাওযা যাবেনা। হাবশী বেলালের ওপর মক্কার পাষাণ্ডরা যে অত্যাচার চালিয়েছে তা চিন্তা করলেও গা শিউরে ওঠে। সুমাইয়াকে নরাধম আবু জাহল হত্যা করলো। খাব্বাবকে লোহা গরম করে গায়ে ঠেসে ধরা হতো। এভাবে তাদের উপর শাস্তি ও নির্যাতনের নিত্য নতুন অনুশীলন চালানো হতো। শুধু দর্বলদের ওপর কেন , সবলদের ওপর কি তাদের আত্নীয়রা কম অত্যাচার করেছে? হযরত উমারের (রাঃ)বোন ইসলাম গ্রহণ করলেন। সেকথা উমারের কানে গেলে তিনি তাকে এমন নির্দয়ভাবে মারে যে তার সারা শরীর রক্তে ভিজে যায়। তিনি ভাইকে সাফ বলে দিলেন, যা ইচ্ছা করুন আমি ইসলাম গ্রহণ করেই ফেলেছি। উমার তার দাসী লাবীনাকেও মারতে মারতে ক্লান্ত হয়ে থেমে যেতেন। এমনিভাবে তিনি স্ত্রীর দাসী যুনাইরাকেও শাস্তি দিতেন। মুসআব ইবনে উময়ার ছিলেন মক্কার এক ধনবতী মহিলার একমাত্র আদুরে ছেলে। তিনি ছিলেন মক্কার সবের্াৎকুষ্ট সুগন্ধি ব্যবহারকারী যুবক। এই যুবক একদিন গোপনে দারুল আরকামে ঢুকে পড়েন এবং ইসলাম গ্রহণ করে বের হলেন। প্রচণ্ড ব্যক্তিত্বের অধিকারিণী মা খুনাস বিনতে মালিক ছেলের এহেন দুর্মতির কথা জানতে পেরে রণমূর্তি ধারণ করলেন। তার অন্তর থেকে স্নেহ মমতা দূর হয়ে পাষাণে রুপ নিল। তিনি ছেলেকে মারপিট, বকাঝকা, ও গালাগাল করতে লাগলেন। তাকে ঘরে আবদ্ধ করে রাখা হল। এক পর্যায়ে মা তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিলেন। সে এক করুণ ইতিহাস! একদিন মুসলমানগণ রাসূলের (স)কাছে বসে ছিলেন। এমন সময় পাশ দিয়ে তারা মুসআবকে যেতে দেখলেন। তাকে দেখেই বৈঠকে উপস্থিত সকলের মধ্যে ভাবান্তর সৃষ্টি হলো। তাদের দৃষ্টি নত হয়ে এল। কারো কারো চোখে পানি এসে গেল। কারণ মুসআবের গায়ে তখন শত তালির জীর্ণ শীর্ণ একটি চামড়ার টুকরা। তাদের সবার মনে তখন তার ইসলাম পূর্ব জীবনের ছবি ভেসে । উঠল। এ দৃশ্য দেখে রাসূল (সাঃ) একটু মুচকি হেসে বললেন ঃ'মক্কায় এ মুসআবকে আমি দেখেছি। তার চেয়ে পিতামাতার বেশি আদরের আর কোন যুবক মক্কায় ছিলনা। আল্লাহ ও তার রাসুলের ভালোবাসায় সে সবকিছু ত্যাগ করেছে২১। আরো অনেক দৃষ্টান্ত দেওয়া যায়। শত বিপদ-আপদ, বাধা বিপত্তি, জান-মালের হুমকি এমনকি জীবন হারানোর মুহূর্তেও সাহাবায়ে কিরাম তাদের ঈমান ও বিশ্বাস থেকে বিন্দুমাত্র টলেননি। বরং ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে বিপদ যত মারাত্নক আকার ধারণ করেছে তাদের মজবুতিও তত বৃদ্ধি পেয়েছে। সাহাবায়ে কিরাম তাদের এমন মজবুত ঈমানের কারনেই আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রসংশা অর্জন করেছেন। আল্লাহ ও তার রাসূলের সন্তুষ্টি তারা লাভ করেছেন। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন- "লোকেরা যাদেরকে (সাহাবা) বললো ঃতোমাদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য লোকেরা সাজ সরঞ্জাম সমাবেশ করেছে। অতএব তোমরা তাদেরকে ভয় করো । একথা তাদের ঈমানকে আরো বৃদ্ধি করে দিল। তারা বললো আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। তিনি কতইনা সফলতা দানকারী। সাদ ইবনে আবী ওয়াককাস (রাঃ) আশারায়ে মুবাশশারার সদস্য ছিলেন। তিনি ইসলাম গ্রহন করলে তাঁর মা অনশন পালন করতে শুরু করে। তিঁনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেন তোমার মত হাজার মাও না খেয়ে জেদ ধরলে আমার পক্ষে ইসলাম ত্যাগ করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন আমরা রাসূল (সাঃ) এর সাথে যুদ্ধ করতাম। তখন লতা পাতা খেয়ে আমাদের পায়খানা ছাগলে বিষ্ঠার মত হয়ে গিয়েছিল। খন্দকের যুদ্ধ সমুপস্থিত। উসামাও হাজির। তাঁরসাথে আরো কয়েকজন কিশোর সাহাবী। রাসুল (সা) সৈনিক বাছাই করছেন। উহুদের মত এবারো তাঁকে ছোট বলে বাদ দেওয়া না হয়, এজন্য তিনি পায়ের আঙ্গুলে ভর দিয়ে উঁচু হয়ে দাঁড়ালেন। তাঁর আগ্রহ দেখে রাসুল (সা) এর অন্তর নরম হল। তাঁকে নির্বাচন করলেন। তরবারি কাঁধে ঝুলিয়ে উসামা চললেন জিহাদে। তিনি তখন ১২/১৩ বছরের এক কিশোর। উসামা তাঁর পিতা সেনাপতি যায়িদ ইবন হারিসার সাথে মুতা অভিযানে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তখন তাঁর বয়স আঠারো বছরেরও কম। এ যুদ্ধে তিনি স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেন পিতার শাহাদাত। তবে তিনি মুষড়ে পড়েন নি। পিতার শাহাদাত বরণের পর যথাক্রমে জাফর ইবনে আবী তালিব ও আব্দুল্লাহ ইবন রাওয়াহার নেতর্ৃত্বে বাহাদুরের মত লড়াই করেন। আসহাবে রাসূলের আল কুরআন চচর্াঃ আবদুল্লাহ ইবনে মাসুদ (রাঃ) নবী (সাঃ) এর নিকট থেকে কুরআন শেখেন। তিনি সুমধুর কণ্ঠে আল কুরআন অধ্যয়ন করেন। এক দিন আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) এবং উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) রাসূল সাঃ এর সাথে গুরূত্বপূর্ণ আলাপ সেরে বেরিয়ে আসেন। এক ব্যক্তি মসজিদে দাঁড়িয়ে সালাতরত অবস্থায় আল কুরআন তেলাওয়াত করছেন। অতঃপর রাসূল (সাঃ) বললেন -আল কুরআন যেমন অবতীর্ণ হয়েছে তেমন বিশুদ্ধভাবে তেলাওয়াত করে কেউ যদি আনন্দিত হতে চায়- সে যেন ইবনু উম্মু আবদের মত তেলাওয়াত করে। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) কুরআনের সূরা গুলোর উপর গবেষণা করে জীবনের বড় একটা অংশ ব্যয় করেন । কেবল সূরা বাকারার উপর গবেষণা করে ১৪ বছর ব্যয় করেন। একরাতে সম্পূর্ন কুরআন খতম করতেন। প্রত্যেক নামাজের জন্য নতুন সূরা তৈরি করে নিতেন । আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা)ঃ রাসুল (সা) এর আপন চাচাতো ভাই আব্দুল্লাহ অগাধ জ্ঞান ও পাণ্ডিত্যের জন্য উম্মতে মুহাম্মদীর হাবর ও বাহর উপাধি লাভ করেন। আল্লাহর ভয়ে তিনি এতটাই বেশি কান্নাকাটি করতেন যে, অশ্রুধারা তার গণ্ডদ্বয়ে দুটি রেখার সৃষ্টি করেছিল। মক্কা বিজয়ের অল্প কিছুদিন পূর্বে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। রাসূল (সা) দোয়া করেন: হে আল্লাহ্ তাকে দ্বীনের ফকীহ বানিয়ে দাও। রাসূলের (সা) ওফাতের সময় তার বয়স হয় মাত্র ১৩ বছর। হাদীস সংগ্রহের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি যখনই শুনেছি কোন সাহাবীর নিকট রাসূলের (সাঃ) একটি হাদীস আছে, আমি তার ঘরের দরজায় উপনীত হয়েছে। এক সফরে তিনি তাবুতে তাহাজ্জুদে দাঁড়িয়ে যান। সূরা ক্কাফ এর ১৯ আয়াত _ "এবং মৃতু্যর বিকার সত্যভাবেই সমুপস্থিত। এ হচ্ছে তাই যা থেকে তুমি পালিয়ে বেড়াচ্ছ। এ আয়াতটি তিনি বারবার আওড়াচ্ছেন এবং কাঁদছেন। সুবহে সাদিক পর্যন্ত তিনি এভাবে কাটিয়ে দিলেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা)কে সাহিবুস সির বা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সকল গোপন বিষয়ের অধিকারী বলা হয়। কুফা থেকে কে ব্যক্তি এসে হযরত উমারকে বললেন _ এক ব্যক্তি নিজের স্মৃতি থেকেই মানুষকে কুরআন শিখাচ্ছেন। উমার (রাঃ) বললেন, তোমার ধ্বংস হোক! লোকটি কে? বলল, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ। উমারের রাগ পানি হয়ে গেল। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) নিজেই বলেনঃ আল্লাহর কিতাবের এমন একটি আয়াত নাযিল হয় নি যে সম্পর্কে আমি জানি না যে তা কোথায় ও কেন নাযিল হয়েছে। ইসলাম গ্রহণের পর উসাইদ ইবন হুদাইর (রাঃ) আধ্যাত্ম সাধনায় এত উন্নতি সাধন করেন যে, তাঁর চোখের সকল পর্দা দূর হয়ে যায়। আর তিলাওয়াতও করতে পারতেন সুমধুর কন্ঠে। (উসুদুল গাবা - ১/৯২) একদিন রাতে তিনি কুরআন তিলাওয়াত করছেন। নিকটেই বাঁধা একটি ঘোড়া। ঘোড়াটি লাফাতে থাকে। তিলাওয়াত বন্ধ করলে ঘোড়াটিও থেমে যায়। আবার তিলাওয়াত শুরু করলে ঘোড়াটি লাফাতে শুরু করে। তাঁর ছেলে ইয়াহইয়া নিকটেই শুয়ে ছিলেন। তিনি ভীত হয়ে পড়লেন এই কথা চিন্ত করে যে, এমনটি করতে থাকলে ছেলেটি ঘোড়ার পায়ে পিষে যাবে। তৃতীয়বারের মাথায় তিনি বাইরে এসে দেখেন, আকাশে একটি ছায়ার মত আচ্ছাদন এবং মধ্যে যেন বাতির আলো জ্বলছে। তিলাওয়াত শেষ হয়ে গিয়েছিল। এজন্য আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখতেই আলোটি অদৃশ্য হয়ে যায়। সকালে ঘটনাটি রাসুলুল্লাহর (সা) বর্ণনা করলে তিনি বলেন, ফিরিশতারা কুরআন তিলাওয়াত শুনতে এসেছিল। তুমি যদি সকাল পর্যন্ত তিলাওয়াত করতে তাহলে লোকেরা তাদেরকে দিনের আলোতে দেখতে পেত। আসহাবে রাসূলের অল্পে তুষ্টি ঃ উমার ইবনুল খাত্তাবের (রাঃ) অল্পে তুষ্টিঃ -আবু বকর (রাঃ) ইন্তেকালের পর তিনি হন আল মদিনা রাষ্টের রাষ্ট্রপ্রধান। রাষ্টের কাজে যখন ব্যবসাতে যথেষ্ট সময় দেয়া সম্ভব হচ্ছিল ন্া তখন আলী ইবনু আবী তালিব (রাঃ) মাজলিসে শুরার সদস্য দেরকে নিয়ে তাকে বায়তুল মাল থেকে ভাতা গ্রহন করতে অনুরোধ করেন । তিনি বার্ষিক আটশত দিরহাম নিতে সম্মত হন। হিজরী ১৫ সনে বায়তুল মাল বেশ সমৃদ্ধি লাভ করে , তখন সকলের ভাতা বাড়ানো হয়। এই সময় তার ভাতার পরিমান নিধর্ারিত হয় পাচ হাজার দিরহাম । এটাও বড়ো কোন অঙ্ক ছিল না। রাসূল (সাঃ) এর কন্যার সাথে আলী (রাঃ) এর বিবাহ হলে তাকে পৃথক ঘর নিতে হয়। টুকটাক কাজ করে যা পেতেন তা দিয়ে সংসার চালাতে থাকেন, তার স্ত্রী নিজ হাতে যাতায় গম পিষতেন, গমের রুটি বানাতেন ও সেকতেন, কুয়া থেকে নিজ হাতে পানি ওঠাতেন। তাদের কোন দাসদাসী ছিল না। উমার ইবনুল খাত্তাবের সময়ে তার জন্য পাঁচ হাজার দিরহাম নিধর্ারিত হয়। আমিনুল মুমিনুল নিধর্ারিত হওয়ার পরও তার জীবন ধারন একই রকম ছিল। জিহাদের ময়দানে নিভর্ীক হিজরী তৃতীয় সনে মাক্কার মুশরিকদের বাহিনী আল মদিনা আক্রমণ করতে এগিয়ে আসে। তাদের সংখ্যা ছিল তিন হাজার, উহুদ প্রান্তরে সাতশ মুজাহিদ নিয়ে তাদের মোকাবেলা করা। এই সময়ে মুসলিম বাহিনীর পতাকা হিল মুস আব ইবনু উমাইরের হাতে। এক অশ্বারোহি শত্রুসেনা এগিয়ে এসে তার ডান হাতে আঘাত হানে। হাতটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর বাম হাতে আঘাত আনলে বাম হয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এর পর দুই বাহু দিয়ে পতাকা অাঁকড়ে ধরে থেকে মুস আব (রাঃ) উচ্চারণ করেন -ওয়া মা মুহাম্মাদুন ইল্লা রাসূল ক্াদ খালাত মিন কাবলিহির রসূল। এরপর তার শরীরে তীর নিক্ষেপ করে তার শরীরে। পতাকাসহ তিনি মাটিতে লুটিয়ে পরেন। শাহাদাত লাভ করেন তিনি। অষ্টম হিজরীতে মুতার যুদ্ধে জাফর ছিলেন রাসূল (সাঃ) নির্ধারিত দ্বিতীয় সেনাপতি। যায়িদ নিহত হলে জাফর পতাকা হাতে নেন। এমতাবস্থায় তার ডান হাতটি দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। পতাকা ধরা বাম হাতটিও অন্য একটি আঘাতে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বাহু দিয়ে ইসলামের পতাকা বুকের সাথে ঝাপটে ধরেন। কিছুক্ষণ পর তরবারির তৃতীয় একটি আঘাতে তাঁর দেহটি দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ)বলেন, জাফরের লাশ পেয়ে দেখা গেল শুধু তার সামনের দিকেই ৫০টি ক্ষত চিহ্ন। সারাদেহে ৯০ টিরও বেশি আঘাত। কিন্তু তার একটিও পেছন দিকে ছিল না। শোকাভিভূত রাসূল (সা:) পরবর্তীতে জিবরীল সুসংবাদ দেন যে, _ "জাফর জান্নাতে ফিরিশতাদের সাথে উড়ে বেড়াচ্ছেন।" এজন্য তাকে দু ডানা ওয়ালা ও উড়ন্ত উপাধি দেওয়া হয়েছে। সাহাবীদের বিপ্লবী জীবন ## অভাব-অনটনের মাধ্যমে জীবন যাপন করাকে প্রাধান্য দেওয়ার বিরল দৃষ্টান্তে সাহাবী হযরত সায়ীদ বিন আমের আল জুমাহী (রা:) :- ১ম ঘটনা: হযরত উমর (রা:) এর খেলাফত কালে তিনি (উমর) হযরত যয়ীদ বিন আমের আল জুমাহী (রা:) কে হিমসের গভর্নর করে পাঠালেন। কিছুদিন পর হিমসের একটি প্রতিনিধি দল ওমর (রাঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ করে অভাবী লোকদের একটি তালিকা দিলেন। সেই তালিকায় সায়ীদ বিন আমের নাম দেখে ওমর (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেনঃ "কে এই সায়ীদ বিন আমের? উত্তরে তারা বললেন ঃ "তিনি আমাদের গভর্নর।" একথা শুনে হযরত ওমর (রাঃ) আশ্চার্যান্বিত হলেন এবং আবার প্রশ্ন করলেনঃ "আমাদের গভর্নর কি অভাবী?" তারা বললেনঃ "নিশ্চয়ই। আল্লাহর শপথ! আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমাদের গভর্নরের পরিবারে দীর্ঘ সময় এমনও অতিবাহিত হয় যখন তাদের রান্না করার কিছুই থাকেনা এবং চুলায় আগুন জ্বলে না।" এ কথা শুনে ওমর (রাঃ) এর চোখের পানিতে দাঁড়ি মোবারক ভিজে গেল। তিনি সায়ীদের জন্য এক হাজার স্বর্ণমাদ্রার একটি থলি পাঠালে, সায়ীদ তা গরীবদের মাঝে বিতরণ করে দিলেন। দ্বিতীয় ঘটনাঃ কিছুদিন পর হিমসের সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য হযরত ওমর (রাঃ) হিমসে গেলেন। সেখানকার জনগণ ওমর (রাঃ) এর নিকট ৪টি অভিযোগ দিলেন সায়ীদ (রাঃ) এর ব্যাপারে। ১ম অভিযোগঃ"সায়ীদ (রাঃ) প্রত্যেহ অফিসে বিলম্বে আসে।" এ অভিযোগের উত্তর সায়ীদ (রাঃ) এর কাছে ওমর (রাঃ) জানতে চাইলে তিনি বলেনঃ "আমার বিলম্বে অফিসে আসার কারণ হলো- আমার ঘরে কোন চাকরাণী নেই। তাই আমাকে রুটি তৈরী করে, গোসল সেরে অফিসে আসতে সামান্য দেরি হয়।" দ্বিতীয় অভিযোগঃ "রাতের বেলা কোন প্রয়োজনে গভর্নরকে ডাকলেন তিনি আমাদের ডাকে সাড়া দেন না,।" এ অভিযোগের জবাবে সায়ীদ (রাঃ) বললেনঃ "আমি দিনকে রাষ্ট্রীয় কার্য ও জনসাধারণের খেদমতের জন্য এবং রাতকে ইবাদাতের জন্য নির্দিষ্ট করে নিয়েছি। তাই রাত্রি বেলা কেউ আসলে তাদের ডাকে সাড়া দিতে পারি না বলে আমি দুঃখিত। তৃতীয় অভিযোগঃ "সায়ীদ (রাঃ) মাসে এক দিন তার কার্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন।" হযরত সায়ীদ (রা:) এই অভিযোগের জবাবে বললেন: "আমিরুল মুমেনীন আমার কোন কাজের লোক না থাকায় মাসে একবার আমাকে বাজার করতে হয়। এছাড়া পড়নের এই পোশাক ছাড়া আমার আর কোন পোশাক নেই, যা ঐদিনই বাজার শেষে পরিস্কার করতে হয়। কাপড় শুকাতে দেরি হওয়ার ফলে আর অফিসে আসার সুযোগ থাকে না।" চতুর্থ অভিযোগ: "মাঝে মাঝে সায়ীদ বেহুঁশ ও অজ্ঞান হয়ে যান। ফলে তার পাশের লোকদের চিনতে পারেন না।" এর উত্তরে তিনি বলেন: মুশরিক থাকা অবস্থায় মক্কার জনসমুদ্রের মাঝে হযরত খুবাইব (রা:) কে মক্কায় কাফিররা টুকরো টুকরো করছিল এবং বলছিল- হে খুবাইব তুমি কি রাজী আছ ? তোমাকে ছেড়ে মুহাম্মদ (সা:) কে হত্যা করি। তার সেই শাহাদাতের নির্মম দৃশ্য মনে পড়লে আমি বেহুঁশ হয়ে যাই। আর কাউকে চিনতে পারি না। শাহাদাতের ঘটনা: মক্কার কাফিররা হযরত খুবাইব ইবনে আদী (রা:) কে বললেন ইসলাম ত্যাগ না করলে তোমাকে নি:শেষ করে দেওয়া হবে। এরপর শুরু হলো অত্যাচার ও নির্যাতন। কাফেররা বলল- তোমাকে ছেরে দিয়ে আমরা মুহাম্মদ (সা:) কে হত্যা করি। খুবাইব (রা:) বললেন- আমার পরিবার পরিজন নিরাপদে থাকবে, আর মুহাম্মদ (সা:) এর গায়ে একটি কাটার আঁচড় লাগবে এটা হতে পারে না। পরিশেষে কাফিররা তাকে ফাঁসির মঞ্চের দিকে নিয়ে গেলে তিনি বলেন, আমাকে দু"রাকাআত নামায পড়তে দিন। নামায শেষে খুবাইব (রা:) বললেন, তোমরা এই মনে না কর যে আমি ফাঁসির জন্য নামায দীর্ঘায়িত করছি। তাহলে আমি আরো দীর্ঘায়িত করতাম। এরপর ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলন্ত খুবাইবের উপর ছুঁড়ে মারে তীর, বর্ষা ও খঞ্জর। ফলে হযরত খুবাইব (রা:) কালেমা শাহাদাত পড়তে পড়তে শাহাদাতের অমীয় পেয়ালা পান করলেন। ত্যাগ-তিতিক্ষার উজ্জল দৃষ্টান্তঃ বদর প্রান্তরে তুমুল যুদ্ধের এক পর্যায়ে আবু উবাইদা (রা:) মৃতু্যর পরোয়া না করে প্রচণ্ড আক্রমণে শত্রুবাহিনীর দুর্ভেদ্য বূহ্যকে ছত্রভঙ্গ করতে সমর্থ হন। এতে মুশরিকদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়ে যায়। এরই ফাঁকে শত্রুবাহিনীর বূহ্য থেকে এক ব্যক্তি আবু উবইদা (রা:) কে বার বার চ্যালেঞ্জ করছিল। তিনি তার চ্যালেঞ্জ এড়িয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তার এ সুযোগে আবু উবাইদা (রা:) এর উপর প্রচণ্ড আঘাত হেনে বসলো। তিনি পাশ কাটিয়ে অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন। সে বার বার তার সামনে এসে দাঁড়িয়ে শত্রু নিধনে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। ধৈর্য্যহীনতার চরম পর্যায়ে আবু উবাইদা (রা:) তরবারীর প্রচণ্ড আঘাতে তার শির দ্বিখণ্ডিত হয়ে ভূমিতে লুটিয়ে পড়লো। ভূলুণ্ঠিত ব্যক্তি আর কেউ নয় আব্দুল্লাহ বিন জাররাহ।রোমানরা বিশাল সেনাবাহিনী সংগঠিত করে সিরিয়ার অন্তর্গত ইয়ারমুক উপত্যকায় মুসলমানদের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। এই যুদ্ধে এক লাখ বিশ হাজার রোমান সৈন্যের সাথে যুদ্ধ করে মাত্র ২৬ হাজার মুসলিম সৈন্য । যুদ্ধে আহত অবস্থায় পরে ছিল ৩ মুসলিম বীর হারিস ইবনু হিশাম , ইকরিমা ইবনে আলী জেহেল এবং আইয়াশ ইবনে আবী বারীয়া (রা ঃ)। পানি পানি বলে চিৎকার করছিলেন হারিস ইবনু হিশাম (রা) । একজন মুসলিম সৈন্য এক পেয়ালা পানি নিয়ে ছুটে আসেন তার কাছে । তিনি পানি পান করতে যাবেন , এমন সময় দেখেন ইকরিমা (রাঃ)তাকিয়ে আছেন পেয়ালার দিকে , হারিস ইবনু হিশাম (রা ) পেয়ারা ধারী সৈনিককে বলেন আগে ইকরিমা কে পানি পান করাও , তিনি তার কাছে গেলেন , ইকরিমা পানি পান করতে যাবেন এমন সময় দেখতে পান আইয়াশ ইবনু আবী রাবীয়া (রাঃ) তাকিয়ে আছেন পেয়ালার দিকে , ইকরিমা (রাঃ) বললেন -আগে আইয়াশকে পানি পান করাও। পেয়ালা হাতে সৈনিক আইয়াশ (রাঃ) কাছে পৌছার আগেই তিনি শাহাদাত বরন করেন , সৈনিকটি পানির পেয়ালা হাতে ইকরিমা (রাঃ) এর কাছে , দেখেন ইকরিমা (রাঃ) শাহাদাত বরন করেছেন , এবার সৈনিকটি পানির পেয়ালা হাতে ছুটে আসেন হারিস ইবনু হিশামের (রাঃ) কাছে। দেখেন তিনিও আর বেঁচে নেই। ইন্তিকালের পূর্বে প্রচন্ড পিপাসায় ছটফট করা কালেও অপর ভাইয়ের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দেয়া চাট্টিখানি কথা নয় । আমানতদারিতার প্রকৃষ্ট উদাহরণ একদিন কিশোর আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ দেখতে পেলেন দুই জন লোক তার দিকে এগিয়ে আসছে তাদের চোখে মুখে প্রচণ্ড ক্লান্তির ছাপ বিদ্যমান। তারা আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ)এর কাছে এসে বলল আমরা পিপাসার্ত তুমি তোমার বকরি থেকে একটি বকরী দাও যা দোহন করে আমরা আমাদের পিপাসা দূর করতে পারি। বালক আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ উত্তর দিলেন আমি বকরির মালিক নই আমি এর রক্ষক ও আমানতদার মাত্র। বালকের আমানতদারিতায় তারা মুগ্ধ হয়ে গেল। আর দুজন ছিলেন হযরত মুহাম্মদ (সঃ) ও হযরত আবু বকর (রাঃ)। দাওয়াতের তীব্র মানসিকতা আবু যার গিফারী (রাঃ) ইসলামের ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তি যিনি রাসূল (সঃ) সর্বপ্রথম সালাম দেন এবং তখন থেকেই ইসলামের এই সালাম প্রথা মুসলমানদের মধ্যে প্রচার ও প্রসার লাভ করে। হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসুদ (রাঃ) একমাত্র মুসলিম যিনি রাসূল(সঃ) এর পরেই পৃথিবীতে প্রকাশ্যে কুরআন পাঠ করে শুনিয়েছিলেন। ঘটনাটি ছিল এরকম ঃ একদিন মক্কার মুসলমান একত্রিত হয়ে বলতে লাগলেন, মক্কার কুরইশদেরকে প্রকাশ্যে পাঠ করে শুনানো সম্ভব হলোনা। এমন কে আছে যে তাদের কে সুউচ্চস্বরে কুরআন শুনাতে পারে? আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) বললেন ঃ আমি তাদেরকে কুরআন শুনাব। পরদিন সকালেই তিনি মাকামে ইব্রাহিমের পাশে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে তেলাওয়াত আরম্ভ করলেন। তিনি তেলাওয়াত করে চলছেন তার এ কাজ কুরাইশদের দৃষ্টি আকর্ষন করল। তারা একযোগে সবাই তার দিকে ছুটে এলো এবং তার মুখমণ্ডলেন উপর বেদম প্রহার করতে লাগলো। আর তিনি সেদিকে খেয়াল না করেই একমনে তেলাওয়াত করেই চলেছেন। সেনাপতি তারিক ফেরার জাহাজ পুড়িয়ে দিলেনঃ স্পেনের আকাশে বাতাসে তখন গথিক শাসনে নিষ্পেষিত মজলুম মানুষের আর্তনাদ। স্পেনের অত্যাচারিত জনগণ গোপনে মুসলিম সেনাধ্যক্ষ মুসার নিকট অত্যাচারের কবল থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আবেদন পাঠাল। মুসা ছিলেন উত্তর আফ্রিকার খলীফা ওয়ালিদের প্রতিনিধি। ৭১১ সালে মুসার আহবানে তারিক সাগরের তীরে এক পর্বতের বুকে এসে প্রাথমিক অবস্থান গ্রহণ করলেন। তারিকের নাম অনুসারে আজ পর্যন্ত এই স্থান জাবালে তারিক (তারিকের পর্বত) জিব্রালটার নামে খ্যাত। সাগর পার হয়ে তারিক স্পেনের মাটি স্পর্শ করলেন। স্পেনরাজ এই স্বল্প সংখ্যক সৈন্যের আবির্ভাবে তিল মাত্র বিচলিত হলেন না। তাঁর বিপুল সৈন্য সামন্ত যে অতি সহজেই এই নবাগত সৈন্যদের নিশ্চিহ্ন করে ফেলবে সে বিষয়ে তাঁর সন্দেহ ছিলনা। তারিখ দেখলেন, তার দুঃসাহসী বীর সৈনিকদের মনেও দ্বিধা উপস্থিত হয়েছে। স্পেনের এত সৈন্যবল, তার সম্মুখে কি তারা? তারিক সৈন্যদের এই বিচলিত ভাব দেখে এক অদ্ভূত কাজ করে বসলেন। সে সকল তরীতে তিনি তার সৈন্যসহ জিব্র্রালটার প্রণালী পার হয়েছিলেন, তা সমস্ত নষ্ট করে ফেললেন। তিনি পিছনের পথ বন্ধ করে মরু সৈন্যদের সম্বোধন করে বললেন, "বন্ধুগণ, অনন্ত সমুদ্র আমাদের পেছনে গর্জন করে চলেছে। আজ যদি কাপুরুষের মত ফিরে যাই তবে সাগরের অতল গর্ভে আমাদের ডুবে যেতে হবে। আর যদি দেশ, জাতি ও ইসলামের গৌরব রক্ষা করে সত্যের পতাকা উড়িয়ে দিয়ে এগিয়ে চলে জয়লাভ করি, তবে জয়মালা আমাদের বরণ করে নেবে। নয়ত মৃতু্যবরণ করে শহীদের দরজা লাভ করবো। এই জীবন মরণ সংগ্রামে কে আমার অনুগামী হবে? সকলেই সেনাপতির আহবানে এক বাক্যে সম্মতি জানালো। আল্লাহু আকবর, আল্লাহ মহান- এই ধ্বনি করতে করতে মরু সৈন্য বিপুল স্পেনীয় বাহিনীর মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়লো। সে প্রচণ্ড আক্রমণের তীব্রতা সহ্য করতে না পেরে স্পেন বাহিনী শোচনীয়ভাবে পরাজিত হলো। স্পেন বিজয়ী তারিকের অপূর্ব শৌর্যবীর্য্য ও সাহস দেখে স্পেন সেনাপতি থিওডামির বিস্মিত ও স্তম্ভিত হয়ে রাজা রডারিকের কাছে লিখলেন, "সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করেও এই অদভূত শৌর্য বীর্যের অধিকারী নবাগতদের অগ্রগতি আমি কিছুতেই রোধ করতে পারলাম না। ইসলামের বিজয় পতাকা উড্ডীন হলো স্পেনে। তারপর গৌরবময় মুসলিম শাসন চললো সেখানে দীর্ঘ ৭শ বছর ধরে। কর্ডোভা, গ্রানাডা, মালাগাকে কেন্দ্র করে যে মুসলিম সভ্যতার বিকাশ ঘটল, তা সারা ইউরোপকে আলোকিত করে তুললো। আর সেই মুসলিম আজ সারা দুনিয়াব্যাপী ঈমান ও ঐক্যের অভাবে সারা দুনিয়াতে মার খাচ্ছে। জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান ঃ রাসূল (স) যখন বদরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন , আবু উসামাও (রা) যাওয়ার সংকল্প করলেন। আবু উসামার (রাঃ) বৃদ্ধা মা ছিলেন। তার সংকল্পর কথা জানতে পেরে তার মামা আবু বুরদা ইবনে নায়ার ছুটে এলেন এবং তাকে তার মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য বললেন। আবু উসামা (র) তার মামাকে বললেন আমি জিহাদে যাব। আপনি আপনার বোনের কাছে থাকুন। কে যুদ্ধে যাবেন এ নিয়ে মামা-ভাগনের মধ্যে ঝগড়া হল, বিষয়টি ফায়সালার জন্য রাসূল (সাঃ)এর কাছে গেলেন। তিনি আবু মুসাকে তার মায়ের কাছে থাকার সিদ্ধান্ত দিলেন৩। উমার (রাঃ)তো বলতেন , তিনটি বিষয় না থাকলে আমি মৃত্যুকেই পছন্দ করতাম। সেই তিনটি বিষয়ের একটি ছিল জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ। তিনি জিহাদকে হজ্জের চেয়েও উত্তম কাজ মনে করতেন।৪ আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (র) বদর যুদ্ধে যাওয়ার জন্য রাসুল (স) এর সামনে দাঁড়ালেন। যুদ্ধে যাওয়ার বয়স না হওয়ায় তিনি তাকে ফিরিয়ে দেন। মনের কষ্টে কাঁদতে কাঁদতে সারাটি রাত তার কেটে যায়। তিনি বলতেন এত কষ্টের রাত আমার জীবনে আর আসেনি। ৫ সারা জীবন পরিবারের লোকদের মধ্যে অবস্থান করে কাজ করার চেয়ে এক ঘণ্টা আল-াহর পথে জিহাদে অবস্থান করা উত্তম _রাসূল (সাঃ) এর এই কথা শুনার পর সাহল ইবনে আমর (রাঃ) বলেন আল্লাহর পথে জিহাদে আমি আজীবন অশ্বারোহী থাকবো। মক্কায় আর ফিরবনা। তিনি সেই যে বের হলেন আর ফিরলেন না। তিনি শামে আমওয়াসের সেই বিখ্যাত 'তাঊন'মহামারিতে মৃত্যু বরণ করেন৭। সেনানায়ক খালিদ উবনে ওয়ালিদ (রঃ) বলতেন , নব বধুর সাথে আমি বাসর করি , অথবা আমাকে নবজাতকের সুসংবাদ দান করা হয় এমন একটি রাতের চেয়ে আমার কাছে বেশি প্রিয় বরফজমা প্রচণ্ড শীতের রাতে একটি মুহাজির বাহিনীর সাথে শত্রু বাহিনীকে পাহারা দেয়া এবং প্রত্যুষে আক্রমণ চালানো। জিহাদের ব্যস্ততার কারনে কোরআনের অনেক কিছু শিক্ষা থেকে বঞ্চিত থাকার কথা তিনি প্রায়ই বলতেন৮। রাসূলের (সাঃ) ইন্তিকালের পর বেলাল (র) খলিফা আবুবকর (র) এর নিকট গিয়ে বললেন ঃআমি রাসূল (সাঃ)কে বলতে শুনেছি ,একজন মুমিনের সবচেয়ে ভালো আমল হল জিহাদ ফি সাবিলিল্ল্লাহ। অতএব আমি জিহাদে যেতে চাই। আবুবকর (র) অনুমতি দিলেন না। হযরত উমর (রাঃ) খলিফা হলেন। বেলাল (র) তার নিকট গিয়ে একই কথা বলে অনুমতি চাইলেন। উমার (র) অনুমতি দিলেন। বেলাল জিহাদে গেলেন৯। তিনি শামে মারা যান। আবু তালহা (রাঃ) বৃদ্ধ বয়সে একদিন কোরআন তেলাওয়াত করছিলেন। যখন তিনি সুরা তওবার ৪১নং আয়াতটি তেলাওয়াত করলেন তখন বলে উঠলেনঃ আমার রব তো দেখি যুবক বৃদ্ধ সবাইকে যুদ্ধে অংশ গ্রহন করতে বলেছেন। তারপর তিনি ছেলেদেরকে বললেন আমার জিহাদে যাওয়ার ব্যবস্থা কর। তারা বললেন আপনি তো রাসূল (স) ,আবুবকর , উমরের (র) সাথে জিহাদে অংশ নিয়েছেন। এখন আপনি ঘরে থাকুন আমরা আপনার পক্ষে জিহাদে যাই। তিনি মানলেন না। তিনি একটি নৌ বাহিনীর সাথে বেরিয়ে পড়লেন এবং সাগরের মাঝে মারা গেলেন। সাতদিন চলার পর একটি দ্বীপ পাওয়া গেলে সেখানে দাফন করা হয়। মুত্যুর সাতদিন পরও লাশ সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ছিল১১। হযরত হানজালা (রাঃ) বদর যুদ্ধে যোগ দিতে পারেননি। তাই তার অন্তরে ছিল তীব্র জালা। তবে উহুদ যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। আর এটাই ছিল তার ইসলামী জীবনের প্রথম ও শেষ যুদ্ধ। তিনি ঘরে স্ত্রী উপগত অবস্থায় ছিলেন। এমন সময় ঘোষকের কন্ঠ কানে গেলঃ'এখনি জিহাদে বের হতে হবে। 'জিহাদের ডাক শুনে সোজা দাঁড়িয়ে গেলেন এবং তাহারাতের গোসলের কথা ভুলে গেলেন। সেই অশুচি অবস্থায় কোষমুক্ত তরবারি হাতে উহুদের প্রান্তরে উপস্থিত হয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং শাহাদাৎ বরণ করলেন। হানজালার স্ত্রী বললেন হানজালা নাপাক ছিলে। সুতরাং তাকে গোসল করানো দরকার। এ বর্ণনা শুনে রাসুল (স) বললেন আমি ফেরেস্তাদেরকে তাদের গোসল দিতে দেখেছি। আল্লাহর বিধি- বিধান বাস্তবায়নে দৃঢ়তাঃ রাসুলুল্লাহর সাহাবীগণ আল্ল্লাহ ও তার রাসূলের (সাঃ)আদেশ নিষেধ তথা শরীয়তের বিধি-বিধান সমূহ অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়নে দৃঢ় সংকল্প ছিলেন। জেনে বুঝে আল্ল্লাহ ও তার রাসূলের (সাঃ)হুকুম তামিল করতে কোন রকম শৈথিল্য দেখিয়েছেন এমন কোন নজির পাওয়া যাবেনা। এখানে মাত্র দুটি ঘটনা বর্ণনা করবো এবং তাতে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। রাসূলে করিমের (সাঃ)ইন্তিকালের পর আরবের কিছু গ্রোত্রের লোক যাকাতকে ট্যাঙ্ মনে তা দিতে অস্বীকার করে। খলিফা আবুবকর (র) তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে মজলিসে শুরার বৈঠক আহবান করলেন। সেখানে দুটি মত প্রকাশ পায়। ১. আল্লাহ ও তার রাসূলের উপর ঈমান পোষণকারী মানুষের সাথে শুধু যাকাত না দেওয়ার কারণে যুদ্ধ করা যাবেনা। ২. যাকাত অস্বীকারকারীদের সাথে যুদ্ধ করে হলেও তাদেরকে যাকাত পরিশোধ করতে বাধ্য করতে হবে। এ মতের পক্ষে ছিলেন আবুবকর (রাঃ) । তিনি এখানে তার মতের পক্ষে যে দৃঢ়তা দেখান তা সত্যিই বিস্ময়কর। তিনি একটি ভাষণ দেন এবং অত্যন্ত জোরালো কন্ঠে বলেনঃআল্লাহর কসম! যারা রাসূলের (সাঃ)কালে একটি রশিও যাকাত হিসাবে পরিশোধ করতো , তারা যদি আজ তা দিতে অস্বীকার করে তাহলে এই লোকদের বিরুদ্ধে অবশ্যই যুদ্ধ করবো। কারণ যাকাত হল ধন সম্পদের হক। রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন ,ইসলাম গ্রহনকারী লোকদের উপর যে হক আসবে তা সব অবস্থাতেই তার কাছ থেকে আদায় করতে হবে১৭। পরবর্তীকালে উমার (রাঃ) বলতেনঃ'আবুবকরের (র)জবাব শুনে আমার প্রত্যয় হল যে, যাকাত অস্বীকারকারীদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য আল্লাহ তার সিনা খুলে দিয়েছেন।'আবুবকর (র)অত্যন্ত কঠোর হাতে যাকাত অস্বীকারকারীদের দমন করেন। আর এমন দৃঢ়তার কারণেই উমার (র) তার প্রিয় পুত্র আবু শামাকে কঠোর দণ্ড দিতে দ্বিধা করেননি এবং আল্লাহর নির্দেশিত দণ্ড প্রয়োগ করতে কোন রুপ স্নেহ-মমতার ও কোমলতার প্রশ্রয় দেননি। মানব জাতির ইতিহাসে এ এক অনন্য ঘটনা। হযরত আব্বাস (রাঃ)ঘটনাটি বর্ণনা করলেন এভাবেঃ আমি একদিন মসজিদে নববীতে বসে ছিলাম। আরো বহুলোক ফারুকে আযমের কাছে বসা ছিল। তখন এক যুবতী এসে আমীরুল মুমিনীনকে সালাম দিল। তিনি সালামের জবাব দিয়ে জানতে চাইলেন তোমার কিছু বলার আছে? সে বলল হঁ্যা আমার পেটে জন্ম নেয়া এ বাচ্চাটি আপনার। তিনি বললেন আমি তো তোমাকে চিনিই না। যুবতীটি কেঁদে ফেলে বললো সন্তানটি আপনার নয় ,আপনার ছেলের। তিনি জানতে চাইলেন ,হালাল পথে না হারাম পথে? সে বললো , আমার দিক হালাল কিন্তু তার দিক থেকে হারাম ছিল। উমার (রাঃ) ঘটনাটি পরিষ্কার করে বলতে বললেন। সে বললোঃ বেশ কিছু দিন আগে আমি একদিন বনী নাজ্জারের এক বাগানের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন আপনার ছেলে আবু শামা মদ্যপ অবস্থায় আমার কাছে এসে তার কামনা চরিতার্থ করার প্রস্তাব দিল এবং আমাকে জোর করে বাগানের দিকে টেনে নিয়ে বাসনা চরিতার্থ করলো। আমি বেহুঁশ হয়ে পড়েছিলাম। আমি এ ঘটনাটি গোপন রেখেছিলাম। এক সময় আমি পেটে বাচ্চার অস্তিত্ব টের পেলাম। ফলে আমি অন্যত্র চলে গেলাম। সেখানে আমার এ শিশু জন্ম নিয়েছে। আপনি আমার ও তার ব্যাপারে আল্ল্লাহর নির্দেশিত বিধান প্রয়োগ করুন। খলিফা উমর (র) সাথে সাথে ঘোষককে লোক জমায়েত হওয়ার ঘোষণা দিতে বললেন। মসজিদে লোক সমবেত হল। তিনি বললেন আপনারা কেউ কোথাও যাবেন না,আমি এখনি আসছি। তারপর তিনি আমাকে বললেন আপনি আমার সাথে আসুন। সেখান থেকে তিনি ঘরে এসে হেঁকে বললেন , আবু শাহমা কি ঘরে আছে? জবাবে বলা হল সে আহার করতে বসেছে। তিনি ভেতরে প্রবেশ করে বললেন হে ,আমার সন্তান! আহার সেরে নাও, এটাই হয়তো তোমার শেষ আহার। আব্বাস (র) বলেন , আমি দেখতে পেলাম যে, সাথে সাথে ছেলের চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল এবং কাঁদতে কাঁদতে হাতের লোকমা পড়ে গেল। তিনি বললেন হে আমার সন্তান! বলতো আমি কে? সে বললো আপনি আমার পিতা ও আমিরুল মুমিনীন। তিনি বললেন আমার কি তোমার আনুগত্য লাভের অধিকার আছে? সে বললো হঁ্যা দুভাবে আপনি আনুগত্য লাভের অধিকারী। পিতা ও আমিরুল মুমিনীন হিসাবে। তখন তিনি বললেন তোমার নবী ও তোমার পিতার দাবির প্রেক্ষিতে বল , তুমি কি ইহুদিদের পাল্লায় পড়ে মদ পান করেছিলে? সে বললো হঁ্যা তবে আমি তওবা করেছি। তিনি বললেন আমার প্রিয় সন্তান !তুমি কি বনী নাজ্জারের বাগানে গিয়েছিলে এবং সেখানে এক যুবতীর সাথে পাপাচারে লিপ্ত হয়েছিলে? এ প্রশ্ন শুনে আবু শাহমা চুপ হয়ে গেল ও কাঁদতে লাগল। তিনি বললেনঃ বেটা লজ্জার কিছু নেই, সত্য বল। আল্লাহ সত্যবাদীকে ভালোবাসেন। সে বললো, হঁ্যা তবে আমার দ্বারা তা হয়েছে। তবে আমি সেজন্য অনুতপ্ত হয়ে তওবা করেছি। হযরত ফারুকে আযম সাথেসাথে তাকে গ্রেপ্তার করলেন এবং তার জামা ধরে টেনে মসজিদে নিয়ে গেলেন। আবু শাহমা তখন কেঁদে কেঁদে বলছিল ,হে আমার পিতা! তরবারী দিয়ে আমাকে কেটে টুকরা টুকরা করে ফেলুন ,মানুষের সামনে নিয়ে আমাকে লজ্জা দিবেন না। উমার (রাঃ) তখন বলেন তুমি কি এ আয়াত পড়নি ঃ"আর তাদের দুজনের এ দণ্ড দানের সময় মুমিনদের একদল লোক উপস্থিত থেকে তা প্রত্যক্ষ করবে"১৮। অত:পর উমার (রাঃ) তাকে টেনে নিয়ে আসহাবে রাসূলের সামনে হাজির করলেন এবং বললেন যুবতীটি সত্য বলেছে এবং আবু শাহমা তা স্বীকার করেছে। তারপর তিনি তার দাস আফলাহকে বললেন একে শক্ত হাতে ধর এবং দোররা মার। একাজে বিন্দুমাত্র শৈথিল্য দেখাবেনা। আফলাহ কাঁদতে কাঁদতে বললো একাজ আমি করতে পারবো না। তিনি বললেন আফলা!আমার আনুগত্য মানে রাসুল (স)এর আনুগত্য। তাই আমি যা নির্দেশ দেই তাই কর। ইবনে আব্বাস বললেন , তিনি আবু শাহমাকে দিয়ে তার জামা খোলালেন। তা দেখে সবাই জোরে জোরে কান্না জুড়ে দিল। আবু শাহমা সকাতরে বললো হে আমার পিতা !আমার প্রতি দয়া করুন। উমারও কান্না জড়িত কন্ঠে বললেন তোমার রব তোমার প্রতি দয়া করবেন। আমি তোমাকে এজন্য দণ্ড দিচ্ছি যেন আমাদের পরয়ারদিগার তোমার ও আমার উভয়ের উপর দয়া করেন। তারপর তিনি আফলাহকে দোররা মারার নির্দেশ দিলেন। সে মারা শুরু করলো। আবু শাহমা করুণ স্বরে কাতরাতে লাগলেন। আফলাহ যখন সত্তর দোররায় পৌছলেন তখন আবু শাহমা বললেন ঃহে আমারপিতা ! ্মাকে এক ঢোক পানি পান করান। তিনি বললেন হে আমার পুত্র! যদি আমার রব তোমাকে কবুল করেন তাহলে মুহাম্মদ (স) তোমাকে হাওজে কাওসারের পানি পান করাবেন। তারপর আর কখনো তোমার পানির পিপাসা লাগবেনা। তারপর তিনি আফলাকে লক্ষ্য করে নির্দেশ দিলেন মারতে থাক। যখন আশি দোররায় পৌছল তখন আবু শাহমা বললেন হে আমার পিতা !আসসালামুয়ালায়কা। উমার (র) বললেন ওয়ালাইকাস সালাম। যদি তোমার সাথে মুহাম্মদ(স)এর দেখা হয় তাহলে তাকে আমার সালাম পেঁৗছিয়ে বলবে ,আমি তাকে কোরআন পড়তে তার উপর আমল করতে এবং তার দণ্ডবিধি বাস্তবায়ন করতে দেখে এসেছি। তারপর বললেন আফলাহ মারতে থাক। যখন নব্বই দোরার মারা হল তখন আবু শাহমা নিশ্চুপ ও নিস্তেজ হয়ে গেল। ইবনে আব্বাস (র)বলেনঃরাসূলের (সাঃ)সাহাবীগণ বললেন ,যে কয় দোররা বাকি রয়েছে তা পরে মারুন। উমার (র)বললেন পাপের কাজে যখন দেরি করা হয়নি তখন দণ্ডদানে দেরি করা হবে কেন?আফলাকে তিনি দোররা মারতে বললেন। শেষ দোররাটি যখন মারা হল তখন আবু শাহমা চিৎকার করে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। ফারুকে আযম তখন তার মাথাটি নিজের কোলে তুলে নিয়ে কেঁদে কেঁদে বললেন ঃসত্যের জন্য তোর মুত্যু হল। তুই শেষ দণ্ডটিও নিয়ে মরেছিস। তোর বন্ধু বান্ধব, আত্নীয়-স্বজন এমনকি তোর বাপও তোকে বাঁচাতে পারলো না১৯। রাসূল সাঃ এর প্রতি ভালবাসা একদল লোক হাত বাঁধা একজন যুবককে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে আসছে। তারা তাঁকে উপুর করে শুইয়ে পিঠে ও মাথায় বেদম মার শুরু করলো। পেছনে এক বৃদ্ধা মহিলা চিৎকার করে করে যুবকটিকে গালি দিচ্ছে। সেই যুবকটি হলেন তালহা (রাঃ) এবং বৃদ্ধাটি তাঁর মা। উহুদ যুদ্ধে বিপর্যয়ের মুহুর্তে মুহাজিরদের মধ্যে একমাত্র তিনিই রাসূল(সাঃ)কে আগলে রেখেছিলেন। তিনি এক হাতে তলোয়ার অন্য হাতে বর্শা নিয়ে কাফিরদের উপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালান। এক পর্যায়ে সাহাবারা সমবেত হলে রাসূল (সাঃ) বলেন 'তোমাদের বন্ধু তালহাকে দেখ।' দেখা গেল তিনি একটি গর্তে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছেন। তাঁর সারা দেহে তরবারী ও বর্ষার ৭০ টিরও বেশি আঘাত লেগেছিল। রাসূল (সাঃ) তাঁর সম্পর্কে মন্তব্য করেন- যদি কেউ কোন মৃত ব্যক্তিকে পৃথিবীতে হেঁটে বেড়াতে দেখে আনন্দ পেতে চায় তবে সে যেন তালহাকে দেখে। তাঁকে জীবিত শহীদ বলা হতো। ঙ্ হযরত আবু বকর (রাঃ) উহুদের প্রসঙ্গ উঠলেই বলতেনঃ সে দিনটির সবটুকুই তালহার। ঙ্ একবার হাযরামাউত থেকে ৭০ হাজার দিরহাম এল । সকাল হতেই সমুদয় অর্থ তিনি গরীবদের মাঝে বন্টন করে দেন। সাহিত্যে -অনুরাগী রাসূল (সা) এর আমলে যেসব কবি ইসলাম বিদ্বেষী কবিদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতেন, তাঁর মধ্যে তিনজন অন্যতম। ইবন সীরীন বলেন, এ তিন কবি হলেন, হাসান ইবন সাবিত, আব্দুল্লাহ ইবন রাওয়াহাও কা'ব ইবন মালিক। এরা রাসূল (সাঃ) এর সাহাবীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কবি। এদের কবিতায় কাফেরদের বিরূদ্ধে যুদ্ধে উৎসাহ, কাফেরদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার ইত্যাদি বিষয় প্রাধান্য লাভ করতো। সাহিত্য সমালোচকদের মতে, তাঁদের কবিতা খুবই উন্নতমানের। কাবের ছেলে আব্দুর রহমান বলেন আমার পিতা একদিন বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কবিদের সম্পর্কে আল্লাত তো যা নাযিল করার তা করেছেন। উত্তরে রাসূল (সাঃ) বললেনঃ একজন প্রকৃত মুজাহিদ তার তরবারি ও জিহবা উভয়টি দিয়ে জিহাদ করে। আমার প্রাণ যে সত্তার হাতে তাঁর নামে শপথ! তোমরা তো শত্রুদের দিকে (জিহবা দিয়ে) তীরের ফলাই ছুঁড়ে মারছো। ন্যায়পরায়নতার দৃষ্টান্তঃ কয়েদী অবস্থায় খুবাইব (রাঃ) উকবার স্ত্রীর কাছে খুর চেয়ে নেন। খুবাইব (রাঃ) যখন ক্ষৌরকার্য করছিলেন তখন উকবার একটি শিশু খেলতে খেলতে তাঁর নিকট চলে যায়। তিনি শিশুটিকে আদর করে কোলে তুলে নেন। খুব শিগগির যাকে শুলীর কাষ্ঠে চড়ানো হবে এমন বন্দীর হাতে ধারালো খুর এবং তার কোলে নিজের সন্তান _ এ দৃশ্য দেখে শিশুর মায়ের অন্তর ভয়ে কেঁপে উঠে। তাঁর মানসিক অবস্থা বুঝতে পেরে বন্দী খুবাইব বললেন তোমার ধারণা, এই শিশুটিকে হত্যা করে আমি আমার রক্তের বদলা নেব। এমন কাজ কখনো আমি করবো না। এমন চরিত্র আমাদের নয়। তারপর তিনি একটু রসিকতা করে বললেন আল্লাহ এখন আমাকে তোমাদের উপর বিজয়ী করেছেন। শিশুটির মা বললোঃ তোমার কাছে আমি এমন আশা করিনি। একথার পর খুবাইব ক্ষুরটি মহিলার সামনে ছুঁড়ে দিয়ে বললেন, এই নাও, একটু মশকরা করলাম। এই মহিলার উপর খুবাইব (রাঃ) এর কথা ও কাজের ভীষণ প্রভাব পড়ে। খুবাইবের হত্যার পর তিনি মুসলমান হন। তিনি বলেন, আমি এই খুবাইবের চেয়ে ভাল কোন কয়েদি আর দেখিনি। আমি কয়েদখানার দরজার ফাঁক দিয়ে দেখতাম তাঁর হাতে মানুষের মাথার আকৃতির বড় বড় আঙ্গুর। তিনি সেই আঙ্গুর খচ্ছেন। এমন আঙ্গুর পৃথিবীর কোথাও খাওয়া হয় তা আমার জানা নেই। মক্কায় তখন আঙ্গুরের বাগানও ছিল না। তাছাড়া তিনি তো লোহার হাতড়া অবস্থায় বন্দী ছিলেন। এ নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট থেকে আসা রিয্ক। সাহাবীরা ছিলেন এক এক জন জীবন্ত কুরআন হযরত সাবিত (রাঃ) এর চরিত্রের সুন্দরতম বৈশিষ্ট্য হল রাসূলে পাক (সাঃ) এর প্রতি সীমাহীন শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে না জানি কোন বেয়াদবি হয়ে যায়, সব সময় তিনি এ ভয়ে থাকতেন। "হে মুমিনগণ তোমরা নবীর কন্ঠস্বরের উপর তোমাদের কন্ঠস্বর উঁচু করো না।" এ আয়াত নাযিল হলে সাবিত (রা) ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে থাকলেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট যাওয়া আসাও ছেড়ে দিলেন। একদন রাসূল (সাঃ) সা'দ ইবনে মু'য়াজকে জিজ্ঞেস করলেনঃ আবু আমর সাবিতের কি হয়েছে? সে কি অসুস্থ? সা'দ বললেনঃ না, সে ভালো আছে। কোন অসুবিধের কথাতো আমি জানি না। এরপর সাবিতের নিকট এসে তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর এ কথা বললেন। তখন সাবিত বললেনঃ সূরা হুজুরাতে এ আয়াত নাযিল হয়েছে। আর তোমরা তো জান আমি তোমাদের সকলের চেয়ে রাসুলুল্লাহ (সা) এর নিকট জোরে কথা বলি। আমি জাহান্নামী হয়ে গেছি। সা'দ তার এ কথা রাসূল (সাঃ) কে জানালে তিনি বললেনঃ না, সে জাহান্নামী নয়, সে জান্নাতের অধিকারী। তওবার দৃষ্টান্তঃ হিজরী ৫ম সনে খন্দক যুদ্ধের সময় মুসলমানদের সাথে বনু কুরায়জা কৃত চুক্তি ভঙ্গ করলে রাসুল (সা) যুদ্ধ শেষে বনু কুরায়জা পৌছে দীর্ঘ ২৫ রাত তাঁদের দূর্গ অবরোধ করে রাখে এবং তাদেরকে আত্মসমর্পনের আহবান জানানো হয়। অবশেষে আল্লাহ তাদের অন্তরে ভীতি সৃষ্টি করে দেন। তারা তাদের পুরাতন বন্ধু হযরত সা'দ ইবন মুয়াজের (রা) সালিশী মেনে নিতে রাজি হয়। মদীনার আউস গোত্রের বনু আমর ইবন আওফ শাখার সাথে বনু কুরায়জার সেই জাহিলী যুগ থেকে মৈত্রী চুক্তি ছিল। আবু লুবাবা ছিলেন এ গোত্রেরই লোক। এ কারণে তারা অবরূদ্ধ অবস্থায় রাসুল (সা) এর নিকট আবেদন জানায়ঃ আমাদের কাছে আবু লুবাবাকে পাঠান, আমরা তাঁর সাথে একটু পরামর্শ করতে চাই। রাসুল (সা) তাদের আবেদন মঞ্জুর করেন এবং আবু লুবাবাকে তাদের কাছে যাওয়ার অনুমতি দেন। আবু লুবাবা বনু কুরায়জায় পেঁৗছালে ইহুদীরা তাঁর প্রতি যথেষ্ট সম্মান প্রদর্শন করে। তারা আবু লুবাবার নিকট তাদের সমস্যা তুলে ধরে। ইহুদী নারী ও শিশুরা কাঁদতে কাঁদতে দিশেহারার মত তাঁর সামনে এসে দাঁড়ায়। দৃশ্যটি ছিল সত্যিই হৃদয় বিদারক। আবু লুবাবার অন্তর কোমল হয়ে যায়। তারা আবু লুবাবাকে প্রশ্ন করেঃ আমরা কি মুহাম্মদের নির্দেশ মেনে নেব। তিনি বললেনঃ হঁ্যা। তবে সাথে সাথে নিজের গলার দিকে হাত দিয়ে ইঙ্গিত করে বুঝিয়ে দেন যে তাদেরকে হত্যা করা হবে। আবেগের বশে এ ইঙ্গিত তো করে ফেললেন। কিন্তু সাথে সাথে এ উপলব্ধি জন্মালো যে, এতে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা) এর প্রতি বিশ্বাস ভঙ্গ করা হয়েছে। তখন তাঁর পায়ের মাটি যেন সরে গেল। তিনি সেখান থেকে সোজা উঠে মসজিদের একটি খুঁটির সাথে নিজেকে বেঁধে দিলেন এবং বললেনঃ যতক্ষণ আল্লাহ আমার তওবা কবুল না করবেন, এভাবে বাঁধা অবস্থায় থাকবো। অবশেষে বিশ / দশ রাত-দিন বেড়ী পড়া অবস্থায় আবু লুবাবার অতিক্রান্ত হয়। নামাজ ও জরুরী প্রয়োজনের সময় তাঁর স্ত্রী বেড়ী খুলে দিতেন এবং প্রয়োজন শেষ হলে আবার বেড়ি বেঁধে দিতেন। উক্ত দিন-রাতের পর আল্লাহ আয়াত নাজিলের মাধ্যমে তাঁর তওবা কবুল করেন। উম্মু সালামা লোকদের বিষয়টি জানিয়ে দিলে লোকজন ছুটে যায় তাঁকে মুক্ত করতে। কিন্তু তাতে তিনি রাজি না হওয়ায় রাসুল (সা) ফজরের নামাজের সময় নিজ হাতে তাঁকে মুক্ত করেন। জ্ঞান আহরণের অদম্য বাসনা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা)ঃ বলেন-"আমি যখনই অবগত হয়েছি, রাসুল (সা) এর কোন সাহাবীর নিকট তাঁর একটি হাদীস সংরক্ষিত আছে, আমি তাঁর ঘরের দরজায় উপনীত হয়েছি। মধ্যাহ্নকালীন বিশ্রামের সময় উপস্থিত হলে তাঁর দরজার সামনে চাদর বিছিয়ে শুয়ে পড়েছি। বাতাস উড়িয়ে হয়তো আমার জামা-কাপড় ও শরীর একাকার করে ফেলেছে। অথচ আমি সাক্ষাতের অনুমতি চাইলে তখনি অনুমতি দিতেন। শুধুমাত্র তাঁকে প্রশ্ন করার উদ্দেশ্যে আমি এমনটি করেছি। তিনি ঘর থেকে বেড়িয়ে আমার এ দুরাবস্থা দেখে বলেছেনঃ রাসুলুল্লাহ (সা) এর চাচাতো ভাই, ্পনি কি উদ্দেশ্যে এসেছেন? আমাকে খবর দেন নি কেন, আমি নিজেই গিয়ে দেখা করে আসতাম। বলেছি, আপনার নিকট আমারই আসা উচিৎ। কারণ জ্ঞান এসে আহরণ করার বস্তু, গিয়ে দেয়ার বস্তু নয়। তারপর তাঁকে আমি হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছি।" ইবনে আব্বাসের এক সঙ্গী বর্ণনা করেন, 'আমি ইবন আব্বাসের এমন একটি মাহফিল দেখেছি যা গোটা কুরাইশ গোত্রের জন্য গর্বের বিষয়। দেখলাম তাঁর বাড়ির সম্মুখের রাস্তাটি লোকে লোকারণ্য। আমি তাঁর কাছে উপস্থিত হয়ে বাড়ীর দরজায় মানুষের প্রচণ্ড ভীড়ের কথা জানালাম। তিনি অজুর জন্য পানি আনালেন। অজু করলেন। তারপর বসে বললেন, 'তুমি বাইরে গিয়ে অপেক্ষমান লোকদের বল যারা কুরআন ও কিরায়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে চাও, ভেতরে যাও।' আমি বেড়িয়ে গিয়ে তাদেরকে এ কথা বললাম। বলার পর এত বিপুল সংখ্যক লোক ভেতরে প্রবেশ করল যে, কক্ষটি এমনকি সম্পূর্ণ বাড়িটি পূর্ণ হয়ে গেল। তারা যা কিছু জানতে চাইলো তিনি তাদেরকে অবহিত করলেন। তারপর বললেন, তোমাদের অপেক্ষমাণ ভাইদের পথ ছেড়ে দাও।' তারা চলে গেল। অতঃপর তিনি আমাকে বললেন, 'বাইরে গিয়ে বল, যারা কুরআনের তাফসীর ও তাবীল সম্পর্কে জানতে চাও, ভেতরে যাও।' আমি বেড়িয়ে গিয়ে তাদেরকে একথা জানালাম। বলার পর লোকে ঘর ভরে গেল। তাদের সবার জিজ্ঞাসারই তিনি জবাব দিলেন এবং অতিরিক্ত অনেক কিছুই অবহিত করলেন। তারপর বললেনম 'তোমাদের অপেক্ষমাণ ভাইদের জন্য পথ ছেড়ে দাও।' তারা বেড়িয়ে গেল। তিনি আমাকে আবার বললেন, 'তুমি বাইরে গিয়ে যারা হালাল হারাম ও ফিকাহ সম্পর্কে জানতে চায় তাদেরকে ভেতরে পাঠিয়ে দাও।' আমি বেরিয়ে গিয়ে তাদেরকে ভেতরে পাঠালাম। তাদের সংখ্যাও এত বেশি ছিল যে ঘরটি সম্পূর্ণ ভরে গেল। তাদের সকল জিজ্ঞাসার জবাব দেওয়ার পর তাদেরকে পরবর্তী লোকদের জন্য স্থান ছেড়ে দিতে বললেন।তারা চলে গেল। তিনি আমাকে আবার পাঠালেন এবং ফারায়েজ ও তৎসংক্রান্ত মাসলা-মাসায়েল সম্পর্কে যারা জানতে চায় তাদেরকে আহবান জানালেন। এবারও ঘরটি ভরে গেল। তাদের সমস্ত জিজ্ঞাসার সন্তোষজনক জবাবদানের পর পরবর্তী লোকদের জন্য স্থান ছেড়ে দিতে বললেন। তারা চলে গেল। তিনি আমাকে আবার পাঠালেন। যারা আরবী ভাষা, কবিতা এবং আরবদের বিস্ময়কর সাহিত্য সম্পর্কে জানতে চায় তাদেরকে পাঠিয়ে দাও। আমি তাদেরকে পাঠালাম। এবারো ঘর ভরে গেল। তিনি তাদের সকল প্রশ্নের জবাব দিয়ে তুষ্ট করে বিদায় দিলেন। বর্ণনাকারী মন্তব্য করেন, 'সমগ্র কুরাইশ গোত্রের গৌরব ও গর্বের জন্য এই একটি সমাবেশই যথেষ্ট।' এমন ভীড়ের কারণেই ইবন আব্বাস সপ্তাহে একটি দিন নির্ধারণ করেছিলেন। ফিকাহ, মাযাগী, কবিতা, প্রাচীন আরবের ইতিহাস প্রভৃতি বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন দিনে তিনি আরোচনা করতেন। তাঁর এসব আলোচনার মজলিশে যত বড় জ্ঞানীই উপস্থিত হতেন কেন, তিনি পরিতৃপ্ত হয়ে ফিরতেন। বিবেকের সচেতনতার দৃষ্টান্তঃ হযরত বারিদা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, "মাগের ইবনে মালেক (রাঃ) রাসুলুল্লাহর (সাঃ) দরবারে হাজির হয়ে বললো, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাকে পবিত্র করুন,' রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, "তোমার সুমতি হোক, যাও, আল্লাহর নিকট তওবা কর গিয়ে।"। মাগের কিছুদূর পর্যন্ত চলে যায়- অতঃপর আবার রাসূলুল্লাহর (সাঃ) কাছে ফিরে এসে বললেন, "ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাকে পবিত্র করুন।" রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আগের মতই জবাব দিলেন, তিনবার এরূপ হলো। চতুর্থবার রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, 'আমি তোমাকে কিসের থেকে পবিত্র করবো?" মাগের বললো, "ব্যাভিচার থেকে'। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) লোকদের নিকট জিজ্ঞাসা করলেন, "এই ব্যক্তি মাতল নয়তো? সকলে জানালো যে সে মাতাল নয়। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) জিজ্ঞাসর করলেন, 'ও কি মদ খেয়েছে? এক ব্যক্তি গিয়ে মাগেরের মুখ শুঁকলেন। দেখা গেল সে মদ খায়নি, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আবার তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, 'তুমি কি সত্যিই ব্যভিচার করেছ? মাগের বললো, হঁ্যা! এরপর তিনি শাস্তির হুকুম দিলেন এবং তাকে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করে শাস্তি কার্যকরী করা হলো। এই ঘটনার দুই তিন দিন পর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, "তোমরা মাগেরের জন্য মাগফেরাতের দোয়া করা। সে যে রূপ তওবা করেছে তা একটি গোটা জাতির মধ্যে বন্টন করে দিলে তাদের জন্য যথেষ্ট হবে।' ব্যাক্তি স্বাধীনতা ও বাক স্বাধীনতাঃ খলিফা হিসেবে ভাষণ দিতে গিয়ে হযরত ওমর (রাঃ) বলেন, "যদি তোমরা আমার মধ্যে কোন বক্রতা দেখ তবে আমাকে সোজা করে দিও।' সমবেত মুসলমানদের মধ্য থেকে একজন বলে ওঠেন, 'তোমার মধ্যে কোন বক্রতা দেখলে আমরা তোমাকে তীক্ষ্মধার তরবারী দিয়ে সোজা করে দেব। ' একথা শুনে ওমর (রাঃ) বললেন, "আল্লাহর হাজার শোকর যে, তিনি ওমরের খেলাফতের মধ্যে এমন ব্যক্তি ও সৃষ্টি করেছেন যে, তাকে তীক্ষ্মধার তরবারী দিয়ে সোজা করেতে পারে। একবার মুসলমানরা গনিমতে কতগুলো ইয়ামেনী চাদর লাভ করেন।্ সকল মুসলমানের মত হযরত ওমর ও একটা চাদর নেন। যেহেতু খলিফার জামার দরকার ছিল তাই আব্দুল্লাহ নিজের অংশের চাদরটাও খলিফাকে দিয়ে দেন যাতে দু\'টো মিলে একটা জামা হতে পারে। এ জামা গায়ে দিয়ে হযরত ওমর (রাঃ) বক্তৃতা দিতে ওঠেন এবং বলেন , 'তোমরা আমার কথা শোন এবং মেনে চল'। তৎক্ষনাৎ সালমান উঠে বললেন, "আপনার কথা আর শোনবনা, আগে একটা প্রশ্নের জবাব দিন, আপনার পরিহিত জামা কি দিয়ে তৈরী করেছেন? নিশ্চই আপনিও একটা চাদরই পেয়েছেন। আপনি খুবই লম্বা মানুষ । ' তিনি বললেন, তাড়াহুড়া করে ফয়সালা করে ফেল না।' অতঃপর তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে ওমরকে ডেকে বললেন, "আমি তোমাকে খোদার শপথ দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি বল, যে চাদর দিয়ে আমি জামা বানিয়েছি তা তোমার চাদর কি না? তিনি বললেন, "হঁ্যা, তখন সালমান বললেন, "এবার বলুন আপনার কি হুকুম। ? আমরা তা শুনবো এবং মানবো। রণকৌশলে সাহাবীদের দক্ষতাঃ অল্প সময়ের মধ্যে রাসূল স: পেঁৗছে গেলেন বদরের নিকটবর্তী অঞ্চলে। ছাউনি ফেললেন ইয়ালীল উপত্যকার ঠিক পেছনে। নবী(স:) এক সাহাবী নিয়ে তথ্যের সন্ধানে বের হয়ে সে অঞ্চলের মুরব্বী শেখের সন্ধান পেলেন। তিনি খুবই খোঁজ-খবর রাখেন বদর দিয়ে কে আসে কে যায়। রাসূল (স:) প্রথমে কৌশলে তাকে মুসলিম বাহিনী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তারপর জিজ্ঞাসা করলেন কুরাইশ বাহিনীর কথা। তিনি অনুমান করে বলেছিলেন অমুক জায়গায় পেঁৗছতে পারে। রাসূল (স:) এর পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বললেন তিনি পানি থেকে এসেছেন। লোকটি মনে করল হয়ত ইরাক অঞ্চল এর লোক কেননা ঐ অঞ্চলে নদ-নদী বেশি। নবী স: কাফেলাতে ফিরে এসে আরো কয়েক জন সাহাবী পাঠিয়ে দিলেন কুরাইশ বাহিনীর সন্ধানে। তারা একটি কুয়োর কাছে এসে দেখে কুয়োর অদূরে কয়েকজন উটসহ ভিণ্ডিওয়ালার সাক্ষাৎ পেলেন। মুসলিম বাহিনী দেখেই তারা পালাতে শুরু করে। তবে দু'জন ধরা পড়ল। তারপর তাদেরকে নবী (স:) এর কাছে হাজির করা হল। রাসুল (স:) বললেন দলটি বড় বা ছোট তারা উত্তর দিল দলটি বেশ বড় সবাই যোদ্ধা। তখন রাসূল (স:) জিজ্ঞেস করলেন তারা প্রতিদিন কয়টি উট যবেহ করে তারা বলল। কোন দিন নয়টি কোন দিন দশটি। নবী (স:) সাহাবীদের বললেন ওদের সংখ্যা নয়শ থেকে একহাজার হবে। তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে জানতে পারলেন যে তাদের প্রস্তুতি বেশ ভাল এবং সমাজের যারা মাথা সবাই এসেছে যুদ্ধে। মুসলিস বাহিনীর উপর রহমতঃ মুসলিম বাহিনী ছিলেন তৃষ্ণার্ত এবং তাদের ভূমি ও ছিল বালুকাময়। তারা চরম কষ্টের মধ্য তখন অবস্থান করছিলেন। তখনই শুরু হল বৃষ্টি, মুসলিম শিবিরে নেমে এল প্রশান্তি। তারা তৃপ্তির সাথে পানি পান করলেন এবং মশক গুলো পূর্ণ করে আগামী দিনের জন্য রেখে দিলেন । পানি পেয়ে আলগা বালুকারাশি বসে যাওয়ায় হাটতে আর পা ডুবে গেল না। তারা চলাচল শুরু করল দ্রুত গতিতে। পক্ষান্তরে কুরাইশ দের অবস্থা হল খুব খারাপ। সেখানকার নরম মাটি আরো নরম হলো কোথাও কোথাও পানি জমল, মাটি কাদা হল ভূমি পিচ্ছিল হয়ে গেল। ফলে কুরাইশ বাহিনী পড়ে গেল মহাবিপদে। বদরের ময়দানে মুসলিম বাহিনীঃ দ্বিতীয় হিজরীর ১৬ রমযান। মুসলিম বাহিনী আগে ভাগেই বদরের ময়দানে পেঁৗছে গেল। বদরের ময়দানে একটি মাত্র জলাশয়। নবী (স:) জলাশয়ের পাশেই শিবির স্থাপন করতে বললেন। কিন্তু লুবাব রা: এর পরামর্শে জলাশয় নষ্ট করে বদরের উত্তর প্রান্তে ঝরনার কাছে শিবির স্থাপন করা হল এবং রাসূল স: মুসলিম সৈন্যদের এমনভাবে দাঁড় করালেন যে, যুদ্ধের সময় মুসলমানদের চোখের ওপর রোদ পড়ে না । চোখ ধাঁধানো রোদ পড়ল মুশরিকদের চোখে-মুখে। এত চমৎকার দল পাওয়া গেল। ওয়াদা পালনের অনন্য দৃষ্টান্ত ঃ হুজায়ফা ইবনে আল ইয়ামন নামের একজন ইয়ামন বাসী বদর যুদ্ধের পূর্বেই তিনি ও তার পিতা ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। যুদ্ধের কথা শুনতেই তারা তৈরী হলেন। রওয়ানা দিলেন বদরের উদ্দেশ্যে। মক্কার পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময়ে মক্কাবাসীরা তাকে আটক করে বলল নিশ্চয়ই তোমরা মুসলমান হয়েছ। তোমরা বদরে যাচ্ছ মুহাম্মদের হয়ে যুদ্ধকরবে। তারপর তারা মক্কাবাসীদের কাছে ওয়াদা করলেন যে তারা মুসলমানদের সাথে যোগ দেবে না, যুদ্ধ করবেনা। তারপর তারা নবী(সঃ) এর কাছে পেঁৗছে ঘটনা খুলে বলল। রাসূল (সঃ) বললেন ওয়াদা রক্ষা কর। যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে মদীনার পথ ধরে। তখন তিনি মদীনার পথে পা বাড়ালেন। যুদ্ধের দিন ঃ মুসলিম সৈন্য মুয়াজ এবং মুয়াব্বাজ দুই ভাই। তখনও তারা কৈশর অতিক্রম করেনি। জিহাদের ময়দানে দাড়িয়ে আবু জাহেলকে খুঁজতে থাকে। মুয়াজ ও মুয়াব্বাজের একান্ত ইচ্ছা তারা দু ভাই মিলে আবু জাহেলের মুখোমুখি হবেন। তারা আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করল চাচা আবু জাহেল কোনটা। আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রাঃ) যখন দেখালেন ঐ যে লোকটা সেই হল আবু জাহেল। বলতে দেরি হল কিন্তু উল্কার বেগে ছুটে যেতে দেরি হল না। অতর্কিত হামলা চালিয়ে তলোয়ারের আঘাতে ক্ষত বিক্ষত করে ফেলে দিল মাটিতে। বিষ্ময়কে হার মানালো এই দু জন কিশোর। আবু জাহেল আহত পাখির মত হাত পা ছোড়ে আর কাতরাতে থাকে। একটু দূরেই ছিল আবু জাহেলের পুুত্র ইকরামা। পিতার দুরবস্থা দেখে নিজেকে একটু সামলে নিয়ে পিছন থেকে ছুটে এসে মুয়াজের উপর বসিয়ে দিল এক কোপ। কোপটি লাগে তার বাম হাতে। হাতটি অনেক খানি কেটে গিয়ে চামড়ার সঙ্গে ঝুলতে থাকে। রক্ত ছোটে ফিনাকি দিয়ে। ততক্ষণে মুয়াব্বাজ এসে যোগ দিয়েছে তার সাথে। এদিকে মুয়াজের কাটা হাতটি এমনভাবে চামড়ার সাথে ঝুলতে থাকে যে সহজভাবে তলোয়ার চালাতে কষ্ট হয়। নিরুপায় হয়ে কাটা হাতটি পায়ের নিচে চেপে ধরে এক ঝটকা টান দিয়ে ছিড়ে ফেলে। ফলে কাটা হাতটি মাটিতে পড়ে থকল। এক হাতে তলোয়ার নিয়েই তিনি ইকারামার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। অবস্থা বেগতিক দেখে রণে ক্ষান্ত দিয়ে ইকরামা পিছনে ফিরে পালায়। নবীজীর এক নম্বর শত্রু তখনও মাটিতে লুটোপুটি খাচ্ছে। বিজয়ের হাসি শুনতে আল্ল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানিয়ে তারা ফিরে আসেন নিজের শিবিরে। নবীজী রওয়ানা হলেন যুদ্ধের ময়দানের দিকে। সাহাবীরাও গেলেন তার সঙ্গে। নবীজী ঘুরে ঘুরে শহীদদের কাছে গেলেন। দক্ষিণ দিকেও পড়ে আছে মুশরিকদের লাশ। মুসলমানরা কখনও শত্রুর মৃত দেহের সাথে খারাপ আচরণ করেন না ন। বদরের যুদ্ধেও এর ব্যাতিক্রম ঘটল না। বন্দীদের তো এভাবে বেশিদিন আটক রাখা যায় না। রাসুল (সঃ) এ ব্যাপারে সাহাবীদের সাথে পরামর্শের জন্য সভায় বসলেন। সাহাবীরা মতামত দিলেন, দোষী সাব্বস্ত হলেই তাদের বিচার হতেইহবে। যার অপরাধ যত বেশি তার মুক্তিপন তত বেশি হবে। প্রত্যেকের মতামতের পর রাসুলে করিম (সঃ) সবাইকে জাানিয়ে দিলেন যে, বিষয়টি সহানুভূতির সাথে বিবেচনা করতে হবে। জনপ্রতি চার হাজার দিরহাম মুক্তিপন নির্ধারণ করা হয়। নবীজী আরো ঘোষণা দিলেন যে, বন্দীদের মধ্যে যারা লেখাপড়া জানে তাদের প্রত্যেকে আমাদের ১০ টি ছেলেকে লেখাপড়া শেখাবে। বন্দীদশা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য আর কোন টাকা পয়সা দেয়া লাগবে না।